অল্প বয়সে বিয়ে। বিয়ের পরে সংসারের দায়দায়িত্ব, সন্তানের মা হওয়া। আর পড়াশোনা করা হয়নি মন্দিরা, জ্যোৎস্না, চিন্তামণিদের। ছেলেমেয়ে বড় হওয়ার পর স্বামীর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সংসারের হালও ধরেছেন। কিন্তু এত কিছুর মধ্যেও তাঁদের ভিতরের ইচ্ছে কোথাও যেন চাপা পড়ে গিয়েছিল। তাঁদেরও লেখাপড়া করার ইচ্ছে ছিল ষোলো আনা। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। অবশেষে স্বপ্নপূরণ। বাঁকুড়ার ওন্দা গার্লস হাই স্কুলের ‘ভোকেশনাল বিভাগ’-এর ওই ছাত্রীরা এ বার উচ্চ মাধ্যমিক দিচ্ছেন বিষ্ণুপুর কৃত্তিবাস হাইস্কুলে। ওন্দার এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহযোগিতায় নতুন জীবন শুরু করার সুযোগ পেয়েছেন তাঁরা।
২০০৩ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন ওন্দার বাসিন্দা মন্দিরা প্রামাণিক। তার পরই বিয়ে, ছেলের জন্ম। দেখতে দেখতে দিন কেটে গিয়েছে। ছেলে এখন ক্লাস ইলেভেনে পড়ে। মন্দিরা এ বার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছেন। মন্দিরার কথায়, ‘কী ভাবে, কী করতে হবে, ছেলেই সব বুঝিয়ে দেয় আমাকে।’
মন্দিরা ক্যাটারিং সংস্থায় কাজ করেন। তিনি জানান, গ্রামেরই কয়েক জন মহিলা মিলে এই ক্যাটারিং সংস্থা খুলেছেন। সংসারে একটু সুবিধা হয়, স্বামীর চাপটাও কমে। এখন বিয়ের মরশুম। তাই এমনও হচ্ছে, রাতে ক্যাটারিংয়ের কাজ করে পর দিন সকালে পরীক্ষা দিতে যেতে হয়েছে।
জ্যোৎস্না পালের ছেলে জয় পালও একাদশ শ্রেণির ছাত্র। জ্যোৎস্নার স্বামী রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। এ বার জ্যোৎস্নাও পরীক্ষা দিচ্ছেন। জয়ের কথায়, ‘মায়ের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় উচ্চ মাধ্যমিক দিতে পারেনি। এ বার মা ওই পরীক্ষা দিচ্ছে। আমিও মাকে সহযোগিতা করছি। মায়ের এগিয়ে যাওয়ার খুব ইচ্ছা। মায়ের পাশে থাকতে পেরে আমার খুব ভালো লাগে।’ নতুন করে পড়াশোনা শুরুর সুযোগ ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেয়ে খুশি চিন্তামণি প্রামাণিক, বীথিকা পালরাও।
যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহযোগিতায় এই মহিলারা নতুন করে স্বপ্ন দেখতে পেরেছেন, সেই সংস্থার তরফে সুদীপন পাল জানান, ৯ জন মহিলার মধ্যে এ বার ৬ জন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। তাঁদের ২ জন ক্যাটারিংয়ের কাজ করেন, ৩ জন সেলাই করেন, ১ জন কাজ করেন স্থানীয় স্কুলে। তিনি জানান, এখন যা দিনকাল, তাতে একজনের রোজগারে সংসার চালানো খুবই কষ্টকর। স্বনির্ভর হতে গেলে শিক্ষার কোনও বিকল্প নেই।