• চার্জশিটে কায়দা করে অভিষেকের নাম কেন? প্রশ্ন অভিষেকের আইনজীবীর
    এই সময় | ০৭ মার্চ ২০২৫
  • নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে তৃতীয় সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দিয়ে সিবিআই অত্যন্ত সুচারু ভাবে যে নামটি বাজারে ভাসিয়ে দিয়েছে, তা হলো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু এই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিক কোন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়? উল্লেখ নেই তার। উল্টে মিডিয়ার হাতে সুকৌশলে সেই চার্জশিটের সঙ্গে জমা করা একটি অডিয়ো ক্লিপের ট্রানস্ক্রিপ্ট তুলে দেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী সঞ্জয় বসুর অভিযোগ, এমন সুকৌশলে সেটা প্রকাশ করা হয়েছে, যাতে ইঙ্গিতটা তাঁর মক্কেলের দিকেই যায়।

    সঞ্জয়ের কথায়, ‘প্রথমত, চার্জশিট অন্য যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁরা হয় নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত, নয় তাঁদের পদ উল্লেখ করা হয়েছে। অভিষেকের নামের আগে-পরে কিছুই বলা হয়নি। সেটা মালদার বাসিন্দা কোনও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও হতে পারেন। দ্বিতীয়ত যদি ধরেও নেওয়া হয়, সেটা ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদ অভিষেকের নাম, তা হলে সেই অডিয়ো ক্লিপে তো তাঁর কোনও কণ্ঠস্বর নেই। এখন কোনও চারজন ব্যাঙ্ক ডাকাত যদি এক জায়গায় বসে বলেন, তাঁদের টাকার ভাগ আমেরিকার প্রেসিডেন্টের কাছে গিয়েছে, তাতে কি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট অভিযুক্ত হয়ে যাবেন?’ সঞ্জয় বলছেন, ‘যতবার অভিষেককে ইডি ও সিবিআই ডেকেছে, ততবার ও গিয়েছে। সমস্ত প্রশ্নের জবাব দিয়ে এসেছে। বলে এসেছে, যতবার ডাকা হবে ততবার ও যাবে। তারপরেও কেন, চার্জশিটে জুড়ে দেওয়া একটি অডিয়ো ক্লিপের ট্রানস্ক্রিপ্ট কায়দা করে অভিষেকের নাম উল্লেখ? কোনও তথ্যপ্রমাণ রয়েছে? থাকলে বলুক না। আমরা আইনত লড়াই করব।’

    সঞ্জয় জানাচ্ছেন, এই নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র, যাঁর বাড়িতে বসে নাকি এই কথোপকথন হয়েছিল, তাঁকে গ্রেপ্তার করেছিল ইডি। পরে তিনি জামিনও পেয়ে গিয়েছেন। সঞ্জয় বলছেন, ‘সেই ইডি–ই তো আদালতে দাঁড়িয়ে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছিল আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে কোনও আদালতগ্রাহ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তা হলে আচমকা সিবিআইয়ের এই তৎপরতা কেন? সামনেই নির্বাচন। তা হলে কি ধরে নিতে হবে, কেউ বা কারা ভয় পেয়ে, নতুন করে চাপ তৈরির জন্য পরিকল্পিত ভাবে এটা করছেন?’ যে অডিয়ো টেপ ট্রানস্ক্রিপ্ট আদালতে জমা পড়েছে, তা ট্যাম্পার বা বিকৃত করা হয়েছে কি না, সেই প্রশ্ন তোলা কি অনুচিত হবে — জানতে চেয়েছেন সঞ্জয়। তাঁর প্রশ্ন, যে তদন্ত শুরু হয়েছিল ২০২২ সালে, তারপরে এত বার অভিষেককে ডেকে কথা বলার এত দিন পরে একটি নথিতে তাঁর নাম উল্লেখ করে কী প্রমাণ করতে চাইছে সিবিআই?

    প্রসঙ্গক্রমে উঠে এসেছে সিবিআইয়ের তদন্তের সফলতা নিয়েও। সঞ্জয় মনে করিয়ে দিচ্ছেন, আরজি কর কাণ্ডে তদন্তে নেমে এমন লাফালাফি শুরু করেছিল সিবিআই, যে এখনই অনেককে গ্রেপ্তার করে ফেলবে। শেষে তো একমাত্র সেই সঞ্জয় রায়ের নামেই চার্জশিট জমা দিয়েছে, ঘটনাচক্রে যাকে কলকাতা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল। ২০২৩–এর মে–তে সুজয়কে গ্রেপ্তার করেছিল ইডি। তারপরে তিনি ২০২৪–এর ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত ইডি এবং জেল হেফাজতে ছিলেন। সেই সময়কালে মাত্র একবার সিবিআই তাঁকে জেরা করার আবেদন করেছিল। ২০২৪–এর ২৫ নভেম্বর কলকাতা হাইকোর্ট থেকে সুজয় ইডি–র মামলায় জামিন পাওয়ার দিনেই সিবিআই তাঁকে নিজেদের হেফাজতে নেয়। তারপরে অসুস্থতার কারণে হাইকোর্ট থেকে ২০২৫–এর ১৮ ফেব্রুয়ারি জামিন পান তিনি। তার ঠিক তিন দিন পরেই, ২১ ফেব্রুয়ারি সিবিআই বিশেষ আদালতে তৃতীয় সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটের সঙ্গে ওই ৭২.৫৯ মিনিটের অডিয়ো ক্লিপের ট্রানস্ক্রিপ্ট জমা দিয়েছে। ২৮ ফেব্রুয়ারি নিম্ন আদালতে ওই মামলার শুনানির সময়ে ওই চার্জশিটের কপি মামলার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের দেওয়া হয়। সঞ্জয়ের প্রশ্ন, তারও দিন কয়েক পরে অত্যন্ত পরিকল্পিত ভাবে সেই তথ্য কি বাজারে ছেড়ে দেওয়া হলো?

    চার্জশিটে সিবিআইয়ের দাবি, তাদের বাজেয়াপ্ত করা এই অডিয়ো ক্লিপে সাত জনের কণ্ঠস্বর রয়েছে। তার মধ্যে একটি তোতাপাখির গলার স্বরও শোনা গিয়েছে। সিবিআইয়ের দাবি, ২০১৬–য় বেহালায় সুজয়ের বাড়িতে বসে এই কথোপথনে সুজয় ছাড়াও ছিলেন তাঁর স্ত্রী, নিয়োগ কাণ্ডে অন্যতম দুই অভিযুক্ত শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় ও কুন্তল ঘোষ, কুন্তলের নিজের অফিসের কর্মী অরবিন্দ রায়বর্মণ, একজন ব্রোকার সুরজিৎ চন্দ্র। চার্জশিটে সিবিআই জানিয়েছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদে অরবিন্দ জানিয়েছিলেন, কুন্তলের নির্দেশেই তিনি সে দিন গোটা কথোপকথনের রেকর্ডিং করেন। পরে সেই রেকর্ডিং–টি তিনি ল্যাপটপে তুলে রাখেন। সেই ল্যাপটপ থেকেই তারা এই টেপ ট্রানস্ক্রিপ্ট পেয়েছে বলে চার্জশিটে দাবি সিবিআইয়ের।

  • Link to this news (এই সময়)