ইউনেস্কো (UNESCO)-র দ্য ওয়ার্ল্ড অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সের মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার (2026 TWAS Award in Engineering & Computer Sciences) জিতে নিলেন খড়গপুরের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক সুমন চক্রবর্তী। সারা বিশ্ব থেকে মাত্র দু’জন বিজ্ঞানীকে এই পুরস্কারের জন্য বেছে নেওয়া হয়। অধ্যাপক সুমন চক্রবর্তী ছাড়া ব্রাজিলের ফেডারেল ইউনিভার্সিটি অফ পারানার বায়োপ্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের প্রধান প্রফেসর কার্লোস রিকার্ডো সকোল এই পুরস্কার পাচ্ছেন।
স্বাস্থ্য পরিষেবায় স্বল্প খরচে নানা রোগ নির্ণয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন আইআইটি খড়গপুরের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর সুমন চক্রবর্তী। শুধু প্রযুক্তি তৈরি বা গবেষণাই নয়, সেই প্রযুক্তির সুবিধা প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই বিজ্ঞানী। ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা একশো বিজ্ঞানীর তালিকাতেও জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। ২০২৩ সালে পেয়েছেন উচ্চশিক্ষায় ‘জাতীয় শিক্ষক’ সম্মান। আইআইটির অধ্যাপক-গবেষক সুমন চক্রবর্তী তাঁর ‘ফ্লুইড মেকানিকস অ্যান্ড থার্মাল সায়েন্স’ নিয়ে গবেষণার জন্য দেশে বিজ্ঞানের সর্বোচ্চ ‘শান্তিস্বরূপ ভাটনগর সম্মান’ও পেয়েছেন। পেয়েছেন ‘ইনফোসিস পুরস্কার-২০২২’।
অধ্যাপক চক্রবর্তী জানান, স্বল্পমূল্যে সুচিকিৎসা সংক্রান্ত গবেষণা তথা নামমাত্র খরচে নানা রোগ নির্ণয়াক প্রযুক্তি তৈরি এবং তা প্রত্যন্ত এলাকায় পৌঁছে দেওয়ার জন্যই এই স্বীকৃতি। পিছিয়ে পড়া এলাকার মানুষজন নানা রোগের সঠিক পরীক্ষা করাতে পারেন না, কিংবা ওই সমস্ত এলাকাতে পরীক্ষার সুবিধা এখনও পৌঁছয়নি, সেখানেও আমাদের প্রযুক্তি পৌঁছে দিতে পেরেছি। তাঁর কথায়, ‘সারা বিশ্বের দু’জন বিজ্ঞানীকে বেছে নেওয়া হয়েছে। এই খবর সত্যিই আনন্দের ও গর্বের। কাজের স্বীকৃতি ও সম্মান, আরও অনুপ্রাণিত করে নিঃসন্দেহে।’
উল্লেখ্য, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী সুমন ২০০২ সালে আইআইটি খড়গপুরের অধ্যাপক হয়ে আসেন। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক সুমনের মূল বিষয় ‘ফ্লুইড মেকানিকস অ্যান্ড থার্মাল সায়েন্স’। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই বিষয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। ডায়াগনস্টিক, সেন্সিং ও থেরাপিউটিকসের জগতে স্বল্পমূল্যের নানা যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন তিনি।
করোনার সময়ে ভাইরোলজিস্ট অরিন্দম মণ্ডলকে সঙ্গে নিয়ে আবিষ্কার করেছিলেন স্বল্পমূল্যে করোনা পরীক্ষার যন্ত্র ‘কোভির্যাপ’। মাত্র ১ টাকায় (ফিল্টার পেপার কেনার খরচ) রক্তাল্পতা নির্ণয়ের জন্য তৈরি করেছেন ‘হিমো অ্যাপ’। মহিলারা যাতে গোপনীয়তা বজায় রেখে যোনিপথের সংক্রমণের পরীক্ষা বাড়িতেই স্বল্প খরচে করতে পারেন, সেই গবেষণাতেও সাফল্য পেয়েছেন আইআইটি খড়গপুরের ‘গর্ব’ বিজ্ঞানী সুমন চক্রবর্তী।