পরিবেশবান্ধব গ্রিটিংস কার্ড, দোল-হোলির শুভেচ্ছায় অভিনব উদ্যোগ আড়শার স্কুলে
প্রতিদিন | ০৭ মার্চ ২০২৫
সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: দুই মলাটের মাঝে ছোট্ট ছোট্ট শব্দ। নানা আঁকিবুকি। রংবাহারি সেই গ্রিটিংস কার্ড কার্যত হারিয়ে যেতে বসেছে আজকের দিনে। একদিকে স্মার্টফোন। অন্যদিকে সামাজিক মাধ্যমের দাপট। শুভেচ্ছা বা ভালোবাসা বিনিময়ের ওই মাধ্যম এখন আর সেভাবে চোখে পড়ে না। কিন্তু কাছের মানুষজনকে দেওয়া ছোট্ট, সুন্দর শুভেচ্ছাপত্র কি চিরতরে হারিয়ে যেতে দেওয়া যায়? মোটেই না। আর তাই গ্রিটিংস কার্ডকে এবার দোল-হোলিতে ফিরিয়ে আনছে বনমহল পুরুলিয়ার আড়শার এক সরকারি স্কুল। সেখানকার খুদে পড়ুয়ারা ভেষজ আবির, রং দিয়ে বানিয়ে ফেলেছে রঙিন, আকর্ষণীয় সব গ্রিটিংস কার্ড।
পুরুলিয়ার সিধো-কানহো- বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে ফুল, দলমণ্ডল, পাতা দিয়ে ফুলেল শুভেচ্ছাপত্র তৈরি করছে জঙ্গলমহলের ওই সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা। সেইসঙ্গে গাছের নিচে পড়ে থাকা ফুল দিয়ে ভেষজ আবির। এভাবেই পরিবেশবান্ধব বার্তায় বনমহলের এই জেলা দোল-হোলির রং খেলে ফ্লোরাল গ্রিটিংসে শুভেচ্ছা জানাবে। পড়ুয়াদের হাতে তৈরি এই হস্তশিল্প বাজারজাত করার ব্যবস্থা করবে সিধো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ই। ওই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বা এই সরকারি স্কুলের সঙ্গে যোগাযোগ করলেই পর্যটক-সহ জেলার মানুষজন একেবারে রাসায়নিক ছাড়া ভেষজ আবির হাতে পাবেন। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সহায়তায় এই কর্মকাণ্ড চলছে।
বুধবার আড়শার ওই সরকারি স্কুলে এই বিষয়ে কর্মশালা হয়। কর্মশালায় ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক পবিত্রকুমার চক্রবর্তী, পুরুলিয়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) সুদীপ পাল, জেলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক মহুয়া বসাক। উপাচার্য বলেন, “ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বলেছিলেন, সারাদিনে এমন কোনও কাজ করবে না যাতে মানুষের ক্ষতি হয়। এই ভেষজ আবির তো তেমনই। দোল-হোলির রঙ খেলায় যাতে মানুষের ক্ষতি না হয়।স্কুলের সঙ্গে যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগসূত্র এখন থেকেই ঘটে তাহলে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে স্কুলছুট কমবে।” তাই ওই সরকারি স্কুলের পড়ুয়াদের বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসার আহ্বান জানান উপাচার্য।
গতবারও এই সরকারি স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা ভেষজ আবির তৈরি করে জেলায় নজর কাড়ে। আর এবার ওই আবিরের সঙ্গে পরিবেশবান্ধব গ্রিটিংস কার্ড। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রধান সুব্রত রাহার বক্তব্য, “ফ্লোরাল গ্রিটিংস এই স্কুলের ক্ষেত্রে এবার নতুন। এই কর্মশালার মধ্য দিয়ে আমরা পড়ুয়াদের স্বনির্ভরতার পাঠ দিলাম। এই কাজের মধ্য দিয়ে হস্তশিল্পেরও প্রসার হলো।”
পলাশ ফুল দিয়ে ফিকে কমলা, কাঁচা হলুদ দিয়ে গাঢ় হলুদ, সিম, পেঁপে, নিমপাতা দিয়ে সবুজ। সেই সঙ্গে সিন্দুরি গাছের পাতা দিয়ে কমলা। পড়ুয়াদের সৃজনশীলতা নজর কাড়ছে সকলের। ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের টিচার-ইন-চার্জ রিনা মুখোপাধ্যায় বলেন, “একদিকে ভেষজ আবির আর সেই সঙ্গে পরিবেশবান্ধব গ্রিটিংস কার্ড। পরিবেশ প্রকৃতির সঙ্গে মিশেই আমরা দোল-হোলি খেলব।” ওই স্কুলের দশম শ্রেণির পড়ুয়া শ্রেয়া মিত্র, জয়দীপ মণ্ডল বলেন, ” গ্রিটিংস কার্ড বানানোর কাজ শিখতে পেরে খুব-ই ভালো লাগছে।” সর্বপ্রথম চিনে গ্রিটিংস কার্ডে শুভেচ্ছা বিনিময় করা হতো। তারপর ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র।