‘ইসলামিক স্টেট অফ বেঙ্গল (আইএসবি)।’ মালদা, মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ দিনাজপুরের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়া উর্দু লিফলেটে এমন একটি সংগঠনের হদিশ পেয়ে উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। এই একটি শব্দবন্ধ গোয়েন্দাদের চিন্তা এতটাই বাড়িয়ে দিয়েছে যে, ফেব্রুয়ারির শেষে কলকাতায় এসে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে গিয়েছেন স্বয়ং ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজ়ার অজিত দোভাল। সীমান্ত এলাকাগুলিতে জঙ্গি সংগঠন আইসিসের স্লিপার সেলগুলির উপর নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।
সূত্রের খবর, ‘অল বেঙ্গল মিডিয়া’ নামে একটি সংস্থার উপর দীর্ঘদিন ধরে নজর রাখছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের গোয়েন্দারা। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির দিকে নজর রাখতে গিয়ে সীমান্ত এলাকার জেলাগুলিতে ওই লিফলেটের খোঁজ পাওয়া যায়। সেখানে ইসলামি খিলাফতের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
গোয়েন্দাদের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৪ সাল থেকে আইসিসের উপর কড়া নজর রাখছে কেন্দ্র। কারণ, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের মদতে আলকায়দার ইন্ডিয়ান সাব কন্টিনেন্ট এবং আইসিস ভারতে সংগঠন বাড়ানোর কাজ শুরু করে তখন থেকেই। এমনকী, সে বছর খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের ঘটনার পরে জেএমবি ভেঙে গিয়ে ওই দুই জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে। ২০১৯ সাল পর্যন্ত নাশকতার কাজ চালানোর পরে আইসিস সিদ্ধান্ত নেয়, বিশ্বজুড়ে ইসলামিক খিলাফত প্রতিষ্ঠা করার পাশাপাশি ইসলামিক ডিপ স্টেট তৈরি করা হবে।
তবে ২০২০ পর্যন্ত সেই কাজে সফল না হওয়ায় আইসিস ঠিক করে এ বার তারা রিজিওনাল খিলাফত স্থাপন করবে। এই কাজে আইসিস–কে আর্থিক এবং পরিকাঠামোগত সাহায্য দিতে রাজি হয়ে যায় আইএসআই। প্রথম ধাপ হিসেবে আইএসআই এজন্য তিনটি গ্রুপ তৈরি করে। এরমধ্যে একটি হলো ‘ইউসুফ–অল–হিন্দ’, দ্বিতীয়টি ‘আনসার–উল–তৌহিদ’ এবং তৃতীয়টি ‘হরকত–উল–হারবে ইসলামি’।
পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার তৈরি এই তিনটি গ্রুপ আইসিসের হয়ে ইসলামি খিলাফত বানানোর প্রাথমিক কাজকর্ম শুরু করে। এজন্য পশ্চিমবঙ্গ এবং মহারাষ্ট্রকে শুরুতেই বেছে নেওয়া হয়। এই গ্রুপের সদস্যরা বাংলা, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, বিহার এবং অসমে স্লিপার সেলে সদস্য সংগ্রহ করার উদ্যোগ নেন। সেই কাজ চলে বেশ কয়েক বছর ধরে।
২০২৩ সালে আইএসআই সিদ্ধান্ত নেয়, কাশ্মীরে একটি সমান্তরাল ঘাঁটি তৈরি করা হবে। সেজন্য ‘গ্লোবাল ইসলামিক খিলাফত’ নামে একটি আলাদা সংগঠন সেখানে খোলা হয়। বাকি তিনটি সংগঠনের সঙ্গে সমন্বয় রাখার জন্য কয়েকমাসের মধ্যে আরও একটি নতুন সাব গ্রুপ কাজ শুরু করে। যার নাম দেওয়া হয় ‘গ্লোবাল খিলাফত কাউন্সিল’। নতুন সংগঠনে যুক্ত হওয়ার পরে কাশ্মীরে যারা আইসিসের হয়ে কাজ করছিলেন, প্রত্যেককে নতুন কাউন্সিলে যুক্ত করে দেওয়া হয়। সেই সময় থেকে এই কাউন্সিল একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মুখোশ পরে জঙ্গি সংগঠনগুলিকে নানা ভাবে সাহায্য করতে শুরু করে। তবে এই সংগঠনের মতাদর্শ ছিল একটু আলাদা। ভারত থেকে কাশ্মীরকে আলাদা করে পাকিস্তানের সঙ্গে না জুড়ে আলাদা খিলাফত তৈরি ছিল নতুন কাউন্সিলের লক্ষ্য।
গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, এই ফ্রন্টাল সংগঠনগুলির মাধ্যমে আইএসআই বাংলাতে জমি তৈরি করে উত্তরপূর্বে বড় ধরনের নাশকতামূলক কাজ করতে চায়। গত কয়েকমাসে বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লা বাংলার জঙ্গিরা ওইসব এলাকা থেকে ধরা পড়ায় গোয়েন্দাদের চিন্তা আরও বেড়ে যায়।
সূত্রের খবর, মূলত এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে অজিত দোভাল কলকাতায় এসে গোয়েন্দা সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এই স্লিপার সেলগুলি যাতে অনুপ্রবেশকারীদের প্রশ্রয় দিতে না পারে সেদিকে কড়া নজর রাখার নির্দেশও দেন তিনি। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের লক্ষ্য, কোনও ভাবে যাতে আইএসআইয়ের মদতে আইসিসের স্লিপার সেলগুলি বাংলা এবং কাশ্মীরে সক্রিয় হতে না পারে।