সুপ্রকাশ মণ্ডল
ফেক নিউজ়ের জন্য চারদিকে কত কী যে ঘটে যাচ্ছে। আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানব জীবনের মতো এই ফেক নিউজ় মানব শরীরেও বিপর্যয় ডেকে আনছে। কী ভাবে? বিজ্ঞানীদের দাবি অনুযায়ী, মানব শরীরে কোষবৃদ্ধি নির্ভর করে বিশেষ সিগন্যালের উপরে। এই কোষের ক্রমান্বয় বৃদ্ধি শরীরের জন্যই জরুরি। আবার ক্যান্সার আক্রান্ত কোষের বৃদ্ধি হলে ক্ষতি বাড়ে। বিজ্ঞানীদের যুক্তি, সাধারণ ভাবে এই ক্যান্সার আক্রান্ত কোষের বৃদ্ধি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু, বিজ্ঞানীদের দাবি, ক্যান্সার আক্রান্ত কোষের এই বৃদ্ধির পিছনে কাজ করছে এক ধরনের ‘ফেক নিউজ়’! কারণ, ক্যান্সার আক্রান্ত যে কোষগুলির বিভাজন-বৃদ্ধির সঙ্কেত পাঠানোর কথা নয়, তারাই সুস্থ কোষকে ভুল বার্তা পাঠিয়ে তার মধ্যে বপন করছে ক্যান্সারের বিষ। শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে মারণ–রোগ।
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, যদি কোষে কোষে এই ভুল বার্তা পাঠানো বন্ধ করা যায়, তা হলে ক্যান্সারের চিকিৎসা আরও সহজ হবে। ক্যান্সার আক্রান্ত কোষ থেকে এই ফেক নিউজ় পেয়ে সুস্থ কোষেও যে ক্যান্সার ছড়াচ্ছে, তা দেখিয়ে দিয়ে ক্যান্সার চিকিৎসায় নতুন দিগন্তের সন্ধান দিয়েছেন বাঙালী বিজ্ঞানী রাহুল দাস। আইসার (ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ)–এর কলকাতার অধ্যাপক রাহুল দাসের এই গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে ‘নেচার কমিউনিকেশন’ পত্রিকায়।
বিষয়টি আসলে ঠিক কী? রাহুল বলছেন, ‘এটা বুঝতে গেলে আগে কোষ বৃদ্ধি বা বিভাজন বুঝতে হবে। মানব দেহের কোষের বৃদ্ধি স্বাভাবিক নিয়মেই হয়। কিন্তু কোষ যদি এ ভাবে লাগাতার বাড়তে থাকে, তা হলে তো বিপর্যয় অনিবার্য। সেই জন্য কোষের বৃদ্ধি এক সময়ে থামানো হয়।’ কারা পাঠায় কোষ বৃদ্ধি ও থামানোর বার্তা? রাহুল বলছেন, ‘প্রতিটি কোষের উপরিভাগে একটি অ্যান্টেনা থাকে। যাকে বলা হয় রিসেপটর। একটি কোষের রিসেপটরের ভূমিকা হচ্ছে অন্য কোষের রিসেপটরকে সঙ্কেত পাঠানো। এই সঙ্কেত পেলে তবেই কোষের সঠিক বৃদ্ধি হয়। তা না হলে কোষ অনিয়ন্ত্রিত ভাবে বাড়তে থাকে।’
রাহুল জানিয়েছেন, গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যে সময় কোষ বৃদ্ধির প্রয়োজন নেই, তখন রিসেপটরগুলি নিষ্ক্রিয় থাকে। ক্যান্সার আক্রান্ত কোষেরও বৃদ্ধির কোনও প্রয়োজন নেই। তাই সেই কোষগুলির রিসেপটরেরও নিষ্ক্রিয় থাকারই কথা। প্রশ্ন হলো, তা হলে ক্যান্সার কী করে ছড়িয়ে পড়ছে শরীরের অন্য অংশে? গবেষণায় রাহুলরা জেনেছেন, ক্যান্সার আক্রাম্ত কোষের ‘নিষ্ক্রিয়’ রিসেপটরগুলি বৃদ্ধির সঙ্কেত পাঠাচ্ছে অন্য সুস্থ কোষের রিসেপটরকে। তাতে সেই কোষও ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছে। এই ভাবে শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে ক্যান্সার।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, আসলে এই আবিষ্কার গন্ধমাদনের মধ্যে থেকে বিশল্যকরণীর সন্ধান পাওয়ার মতো। ক্যান্সার আক্রান্ত কোষের রিসেপটরগুলির এই ফেক নিউজ় পাঠানো বন্ধ করতে পারলেই কেল্লা ফতে। বিজ্ঞানীদের দাবি, পরবর্তী পর্যায়ে ক্যান্সার আক্রান্ত কোষগুলি থেকে এই ফেক নিউজ় পাঠানো বন্ধ করতে পারলেই বাগে আনা যাবে মারণ রোগকে।