যাত্রী: কোথায় আছেন, ফোন করছি ধরছেন না কেন?
ক্যাব চালক: কেন স্যর, এই তো হালতু বাজারের সামনেই দাঁড়িয়ে। হাত তুলুন।
যাত্রী: আপনি...! আমি তো এই নম্বরের গাড়ি বুক করিনি?
ক্যাব চালক: আমিই স্যর। এই তো দেখুন আপনার সঙ্গেই কথা হচ্ছে। উঠে পড়ুন।
৪ মার্চ, বিকেল তখন পৌনে ৫টা। দক্ষিণ কলকাতার হালতুতে যে অ্যাপ–ক্যাব এসে যাত্রীকে পৌঁছে দিল গন্তব্যে, তা ওই যাত্রীর বুক করা ক্যাব ছিল না বলেই অভিযোগ। গন্তব্যে পৌঁছনোর তাড়া থাকায় সাতপাঁচ না ভেবে ওই ক্যাবেই উঠে পড়েন তিনি। গাড়ির নম্বরের এই অদল–বদল কী ভাবে? চালকের কাছ থেকে তার সঠিক উত্তর পাননি যাত্রী। উল্টে চালক বলেন, ‘আমি বলতে পারব না। এত কিছু জানি না। যেতে হলে উঠে পড়ুন।’ বার বার এমন সমস্যা হলে যাত্রী–সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে বলে মনে করছেন শহরবাসীর অনেকেই। ঘটে যেতে পারে অপরাধ। দুর্ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট নম্বরের গাড়িতে যাত্রী এবং চালক বিমার দাবি করতে পারবেন কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন থাকছে।
হালতুর ঘটনা একমাত্র নয়। এক মহিলা যাত্রী ধর্মতলা থেকে অ্যাপ–বাইক বুক করেছিলেন। অফিস থেকে গন্তব্য ছিল বেহালা। যে বাইক–চালক এসেছিলেন, তাঁর বাইকের নম্বরও ছিল আলাদা। রাতে আর ঝুঁকি নেননি ওই মহিলা যাত্রী। নম্বরে এই গোলমালের জন্যে নানা কারণ থাকতে পারে বলে মনে করছে অ্যাপ–ক্যাব সংগঠনগুলি। এমন যে ঘটছে, তাদের কাছেও অভিযোগ আসছে। এর নেপথ্যে যেমন অসাধু চালক জড়িত থাকতে পারেন, আবার যে সংস্থা পরিষেবা দেয়, তাদের নজরদারির অভাব এবং সফটওয়্যারের গোলমালও হতে পারে বলে দাবি সংগঠনগুলির।
ক্যাব সংস্থাগুলির তরফে চালকের নাম–সহ একটি আইডি জেনারেট করা হয়। পাসওয়ার্ড দেওয়া হয়। গাড়ির নম্বরের সঙ্গে লিঙ্ক করা চালকের ফোন নম্বরে বুকিং আসে। বুকিং হওয়ার পরে চালকের কাছে মোবাইল থাকলেও বাস্তবে সেই গাড়ি নিয়ে চালক বেরোচ্ছেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহপ্রকাশ করেছে সংগঠনগুলি। অর্থাৎ আইডি এবং মোবাইল নম্বর এক থাকলেও মাঝখানে গাড়ি বদল হয়ে যাচ্ছে না তো? এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অ্যাপ নির্ভর বাইক–ক্যাব সংগঠনগুলিও। এআইটিইউসি-র পরিবহণকর্মী সংগঠনের নেতা নওলকিশোর শ্রীবাস্তব বলেন, ‘অ্যাপ-ক্যাব সংস্থাগুলিকে নিয়ন্ত্রণে সরকার নির্দিষ্ট বিধি প্রকাশ করেছিল। কিন্তু কার্যকরী হয়নি। কঠোর বিধি দরকার। এ বিষয়ে আমরা বার বার পরিবহণমন্ত্রীর কাছে দরবার করেছি, কিন্তু লাভ হয়নি।’
গত ৪ মার্চের ঘটনা সংশ্লিষ্ট অ্যাপ–ক্যাব সংস্থার পূর্বাঞ্চলের কর্তাকে জানানো হলে তিনি বলেন, ‘কেন এমন হচ্ছে, তা আমরা রিভিউ করে দেখব। কোথাও ফাঁক রয়েছে কি না, ম্যানেজমেন্টের শীর্ষস্তরে জানানো হবে।’ একই সমস্যার মুখোমুখি হওয়া মহিলা যাত্রীর মন্তব্য, ‘যাঁরা অফিস করে ফেরেন রাতে, তাঁদের সঙ্গে এমন হলে খুবই বিপজ্জনক।’
এমন অভিযোগ ওঠায় সিটু পরিচালিত ওলা–উবর অপারেটর্স অ্যান্ড ড্রাইভার্স ইউনিয়নের সহ সম্পাদক সোহাগ খানের বক্তব্য, ‘যাত্রীরা অনেক সময়ে চালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন অ্যাপের মাধ্যমে। তখন তদন্ত না করেই ওই আইডি বাতিল করে দেওয়া হয়। সেই আইডি নিয়ে জালিয়াতি হতে পারে।’ এই সমস্যার কথা শুনে লালবাজারের এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘সমস্যা গুরুতর। এমন হয়ে থাকলে সেই যাত্রী যদি অভিযোগ করেন, অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’