চাঁদকুমার বড়াল, কোচবিহার
অন্ধকারে ঢেকেছে শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডের রাস্তা। পুর–নাগরিকদের কাছে অভিযোগ পেয়ে কাউন্সিলাররা পুরকর্তৃপক্ষকে জানালে পথবাতি কেনার জন্য টেন্ডারও করা হয়। সেই মতো কয়েক লক্ষ টাকার পথবাতি এলেও কোচবিহার শহরের রাস্তায় তা লাগাতে পারছেন না পুরকর্মীরা। কেন? অভিযোগ, ভালো দাম দিয়ে বাতি কিনলেও গুণগত মান ভালো নয়। ঔজ্জ্বল্য কম। পর্যাপ্ত আলো না–মেলায় পুরসভায় এখন ডাঁই করে ফেলে রাখা হয়েছে পথবাতি।
জানা গিয়েছে, পথবাতিগুলো ফেরত দেওয়া হবে, নাকি তার দীপ্তি কম থাকলেও লাগানো হবে, এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি পুরকর্তৃপক্ষ। কোচবিহার পুরসভার চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, ‘যাঁরা পথবাতি সাপ্লাই দিয়েছেন তাঁদের লোকজন আজ, শুক্রবার পুরসভায় আসবেন। তাঁদের সামনে পাওয়ার টেস্ট করা হবে।’ বাতিগুলোর মান ভালো না খারাপ, সে ব্যাপারে মন্তব্য করেননি চেয়ারম্যান।
কোচবিহার পুরসভার সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের ২০টি ওয়ার্ডেই বর্তমানে একাধিক পথবাতি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এর ফলে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই অন্ধকারে ঢেকে যাচ্ছে বিভিন্ন ওয়ার্ডের ছোট ছোট গলি। কাউন্সিলরা দীর্ঘদিন ধয়ে পথবাতি সাপ্লাই দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে কোচবিহার পুরসভা পথবাতি কেনার জন্য গত মাসে টেন্ডার করে। জানা গিয়েছে, সব মিলিয়ে ১৯ লক্ষ টাকার টেন্ডার করা হয়। সেই টাকায় ৪০০টি পথবাতি কেনার বরাত দেওয়া হয় একটি এজেন্সিকে।
প্রত্যেকটি বাতির দাম ঠিক হয় তিন হাজার একশো টাকা। গত সপ্তাহে পুরসভায় প্রথম ধাপে ২৪৮টি পথবাতি এসেছে। পরবর্তী ধাপে বাকি আরও ১৫২টি বাতি সরবরাহ করবে সংশ্লিষ্ট এজেন্সি। একটি নামি কোম্পানির ৭০ ওয়াটের এলইডি বাল্ব ওয়ার্ডে লাগানোর আগে মঙ্গলবার কোচবিহার পুরসভা ভবনের পিছনে পরীক্ষা করেন পুরকর্মীরা। তাঁরা লক্ষ্য করেন, ৭০ ওয়াটের বাল্বে আলোর উজ্জ্বলতা অনেক কম।
এরপরেই বিষয়টি জানানো হয় চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথকে। এই পরিস্থিতিতে সমস্ত ওয়ার্ডে পথবাতি লাগানোর প্রক্রিয়া স্থগিত রাখা হয়েছে। কোচবিহার পুরসভার বাম কাউন্সিলার মধুছন্দা সেনগুপ্ত বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই ওয়ার্ডের একটা বৃহৎ অংশ অন্ধকারে রয়েছে। পুরসভায় বারবার বলার পরেও আলোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। নিজে খরচ করে কয়েকটি লাইট লাগিয়েছি। এখন পুরসভা পথবাতি কিনলেও সেগুলো ঠিকঠাক নেই বলে শুনতে পাচ্ছি।’
লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করার পরেও পথবাতির গুণগতমান কেন ঠিক নেই তা নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। এ ক্ষেত্রে কোনও দুর্নীতি হয়েছে কিনা সেই প্রশ্ন তুলেছেন কাউন্সিলারদের একাংশ। কোচবিহার পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার তথা পুরসভার বিদ্যুৎ বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য উজ্জ্বল তর বলেন, ‘কয়েক লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে যে বাতিগুলো কেনা হয়েছে, শুনেছি, তার গুণমান ঠিক নয়। কোন এজেন্সি বরাত পেয়েছে, কী ভাবে পেয়েছে, কী হচ্ছে, কিছুই জানি না। আমি নিজেই অন্ধকারে।’