কসবা কাণ্ডে এবার আরও এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। প্রথমে এই ঘটনায় মৃত সোমনাথ রায়ের মামা ও মামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বুধবার মৃতদের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ্যে এসেছে। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী, শিশুটির নাক ও মুখে একাধিক আঘাতের চিহ্ন ছিল। তদন্তকারীদের অনুমান, সন্তানকে খুন করে গলায় দড়ি দিয়েছিলেন ওই দম্পতি। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত ব্যক্তির নাম চঞ্চল মুখোপাধ্যায়। অভিযোগ, তিনি টাকার বিনিময়ে সোমনাথকে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে ১০ লক্ষ টাকার ঋণ পাইয়ে দিয়েছিলেন। এই গোটা ঘটনায় চঞ্চলের ভূমিকা কী তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
মঙ্গলবার সকালে কসবার হালতুতে সোমনাথ রায়, তাঁর স্ত্রী সুমিত্রা রায় এবং আড়াই বছরের পুত্রের দেহ উদ্ধার করা হয়। ছেলের দেহ নিজের সঙ্গে বেঁধে গলায় দড়ি দিয়েছিলেন সোমনাথ। তাঁর স্ত্রীয়েরও ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। পুলিশ তদন্তে নেমে দেখতে পায়, ঘরের দেওয়াল জুড়ে ‘সুইসাইড নোট’ লেখা রয়েছে। তাতে পরিবারের কয়েকজন সদস্যের নাম রয়েছে। সুমিত্রার পরিবারের দাবি, সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের জেরেই ওই দম্পতি আত্মঘাতী হয়েছেন। সোমনাথ ও সুমিত্রা বাড়ি বিক্রি করতে চাইছিলেন। সেখানেই বাধা দিতে থাকেন মামা ও মামি। অন্যদিকে প্রতিবেশীদের অনেকেই দাবি করছেন, সোমনাথের বাড়িতে পাওনাদাররা আসতেন। ঘটনার তদন্তে নেমে সবদিক খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
বুধবার মৃত দম্পতি ও তাঁদের ছেলের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ্যে এসেছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, শিশুটির নাক ও ঠোঁটে একাধিক আঘাতের চিহ্ন ছিল। তার মুখে কিছু চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। তদন্তকারীদের অনুমান, সোমনাথ এবং তাঁর স্ত্রী সুমিত্রা রায় আগে ছেলেকে খুন করে তারপর নিজেরা গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন। তাঁদের আত্মহত্যার বিষয়টি ময়নাতদন্তের রিপোর্টে নিশ্চিত করা হয়েছে।
কসবা কাণ্ডে থানায় দু’টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। প্রথম অভিযোগটি করেছেন মৃত সুমিত্রার দিদি সুপর্ণা ভৌমিক। অপর অভিযোগটি করেছেন সুমিত্রার বাবা বিশ্বনাথ ভৌমিক। সোমনাথের মামা প্রদীপকুমার ঘোষাল এবং মামি নীলিমা ঘোষালের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা ও অপরাধ মূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছেন সুপর্ণা ভৌমিক। অন্যদিকে সুমিত্রার বাবা অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ করেছেন। ঘটনার পরেই সোমনাথের মামা-মামি এবং মাসিকে আটক করে পুলিশ। সুপর্ণার অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাতে সোমনাথের মামা ও মামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ বার দ্বিতীয় অভিযোগের তদন্তে নেমে পুলিশ চঞ্চলকে গ্রেপ্তার করেছে। এই ঘটনার নেপথ্যে আর কী কী কারণ রয়েছে তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।
পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, পেশায় অটোচালক সোমনাথ আর্থিক সমস্যায় ভুগছিলেন। জন্মের পর থেকেই তাঁর সন্তানের শারীরিক সমস্যা ছিল। সন্তানের চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা খরচ করে ফেলেছিলেন তিনি। বাজারে কয়েক লক্ষ টাকার ঋণও হয়ে গিয়েছিল। পাশাপাশি সম্পত্তি নিয়ে মামা-মামির সঙ্গে ঝামেলা প্রায় নিত্যদিনের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তদন্তকারীদের অনুমান, এই সব কারণেই মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন দম্পতি।