২০২৬-এর নির্বাচনের আগে শাসকদল তৃণমূলের মাথাব্যথা একটাই, ভুতুড়ে ভোটারের উপদ্রব। ভোটার তালিকায় কারচুপি রুখতে গত সপ্তাহে নেতাজি ইন্ডোরে দলের মেগা বৈঠক থেকে তৃণমূল-সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গড়ে দেওয়া কোর কমিটি এবার বসল বৈঠকে। দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর নেতৃত্বে ৩৬ জনের এই কমিটির অন্যতম সদস্য দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। দলনেত্রীর নির্দেশের পর, সাতদিনের মাথায় বৃহস্পতিবার তৃণমূল ভবনে বসল এই কমিটির বৈঠক।
জানা গিয়েছে, এই ইস্যুতেই আরও এক বৈঠকের ডাক দিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলায় জেলায় ভুয়ো ভোটারদের চিহ্নিত করতে বৃহস্পতিবারের বৈঠকে জেলাভিত্তিক কোর কমিটি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এই কমিটিগুলিতে কমপক্ষে ১১ জন প্রতিনিধি থাকছেন।
সুব্রত বক্সীর নেতৃত্বে আয়োজিত এ দিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, সাংসদ পার্থ ভৌমিক, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ডা. কাকলি ঘোষ দস্তিদার-সহ কোর কমিটির অধিকাংশ সদস্যরা। অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায় এই বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারেননি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে আগামী ১৫ মার্চ ভূতুড়ে ভোটার ইস্যুতে ভার্চুয়াল বৈঠক ডেকেছেন তিনি। ওই বৈঠকে কোর কমিটির সদস্যদের পাশাপাশি দলের জেলা সভাপতি, বিধায়ক, চেয়ারম্যান এবং অন্যান্য নেতৃত্বদেরও উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। সেখানে জেলা থেকে আসা রিপোর্টগুলি নিয়ে আলোচনা হবে। এরপর তা পেশ করা হবে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে।
তৃণমূল নেত্রী স্পষ্ট বার্তা দিয়েছিলেন, ‘ভোটার লিস্ট ক্লিন করতে হবে।’ সেই নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করছে কোর কমিটি। এ দিনের বৈঠকে মূলত পাঁচটি বিষয়ের উপর জোর দিয়েছেন দলের রাজ্য সভাপতি। প্রথমত, ২০২৫ সালের ভোটার তালিকার বিধানসভাভিত্তিক প্রত্যেকটি বুথের ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে স্ক্রুটিনি করতে হবে। একইসঙ্গে ভোটার তালিকার সত্যতা যাচাই করতে হবে। দ্বিতীয়ত, অনলাইনে যে সমস্ত ভোটারদের নাম নথিভুক্ত করা হচ্ছে তাঁদের উপর বিশেষ নজর দিতে হবে। কারণ, অফলাইনের তুলনায় অনলাইনে কারচুপির প্রবণতা বেশি থাকে। তৃতীয়ত, একই এপিক নম্বর বিশিষ্ট একাধিক ভোটারদের নিয়ে তৈরি করতে হবে পৃথক তালিকা।
সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের দেওয়া ব্যাখ্যা অনুযায়ী, একই এপিক নম্বরে দু’জনের নাম থাকা মানেই ভুয়ো ভোটার নয়। এরপরই সেই ভোটারদের নিয়ে পৃথক তালিকা তৈরিতে জোর দিয়েছে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। চতুর্থত, আমাদের রাজ্যে ভোট দেওয়ার অধিকারী নন এমন নামগুলি আলাদাভাবে নথিভুক্ত করতে হবে। পঞ্চমত, অন্যায়ভাবে ভোটার তালিকা থেকে যে সমস্ত নাম বাদ গিয়েছে, সেগুলিকে পুনরায় নথিভুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি রাজ্যের ৮১ হাজারের বেশি বুথের প্রত্যেকটি ভোটার লিস্টের প্রত্যেকটি ভোটারের উপর নিয়মিত নজরদারি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নেতাজি ইন্ডোর থেকে দলনেত্রীর নির্দেশ ছিল, ১০ দিনের মধ্যে এই সংক্রান্ত রিপোর্ট দিতে হবে। সেই লক্ষ্যে প্রথম পর্যায়ের বৈঠক সারল কোর কমিটি। উল্লেখিত পাঁচটি দায়িত্ব পূরণে প্রত্যেক বুথ এবং ব্লক স্তরে চলবে বিশেষ অভিযান। সূত্রের খবর, কোর কমিটির প্রত্যেক সদস্যের কাঁধে রয়েছে একাধিক জেলার ভোটার তালিকার স্ক্রুটিনির দায়িত্ব। সুব্রত বক্সীর নির্দেশ, জেলায়-জেলায় সমন্বয়ের উপরও জোর দিতে হবে। স্ক্রুটিনি শেষে আরও একবার তৃণমূল ভবনে বসবে দলের কোর কমিটির বৈঠক। সেখানে জমা পড়বে চূড়ান্ত রিপোর্ট। সেই রিপোর্ট খতিয়ে দেখে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হবেন দলের শীর্ষ নেতৃত্বরা।