• ‘ফ্রুট জুস’-এর যুগে একশো পেরিয়েও বহাল বাঙালি শরবত
    এই সময় | ০৭ মার্চ ২০২৫
  • এই সময়: একরাশ টাটকা ফল সাজিয়ে অপেক্ষায় বিক্রেতা। মাঝে বসানো একটি যন্ত্র। আগ্রহী ব্যক্তি নিজে পছন্দের ফল বেছে দিচ্ছেন, সেই ফল মেশিনে পিষে তার রস বের করে বরফের কুচি এবং আরও নানা ধরনের ‘মশলা’ মিশিয়ে ‘ব্লেন্ড’ করে তুলে দোকানি তুলে দিচ্ছেন কাস্টমারের হাতে। একেবার টাটকা এবং প্রাকৃতিক গুণে ভরপুর ফলের রস।

    ‘জুস পার্লার’ বা ‘জুস সেন্টার’ জাতীয় দোকানগুলোর নামেও একটা আলাদা আধুনিকতা। তবে এই আধুনিকতা আজও বাঙালির আদি এবং অকৃত্রিম ‘শরবত’–এর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এঁটে উঠতে পারেনি। বিধান সরণির ‘কপিলা আশ্রম’ হোক বা কলেজ স্কোয়্যারের ‘প্যারামাউন্ট’ — একশো পার করা দুই শরবতের দোকান আজও শয়ে শয়ে মানুষের তৃষ্ণা হরণ করে চলেছে।

    ১৯০৭ সালে হৃষিকেশ শ্রীমানীর হাতে বিখ্যাত এই শরবতের দোকানের উদ্বোধন। ১১৮ বছর পর দিব্যেন্দু শ্রীমানী ব্যবসা চালাচ্ছেন। ব্যবসার অবস্থার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের দই ঘোল যেটা ‘দধিতি’ নামে পরিচিত ছিল, সেটা আজও বিপুল জনপ্রিয়। রয়েছে দই–ক্ষীর–বাদাম দিয়ে তৈরি স্পেশ্যাল শরবত। ‘কেসর মালাই’ এবং ‘আবার খাই মালাই’–এর জনপ্রিয়তাতেও ভাটা পড়ার কোনও লক্ষণ নেই।’

    একশো বছরেরও বেশি আগে যখন এই দোকা‍ন চালু হয়েছিল, সেই সময়ে কোনও যন্ত্র বা সিরাপ ছাড়াই পুরোদস্তুর হাতে করে শরবত তৈরি হতো। আজও সেই ঐতিহ্য বজায় রয়েছে এখানে। কপিলা আশ্রমের নামকরা শরবতগুলোর অন্যতম কাঁচা আমের শরবত। বাজারে কাঁচা আম না ওঠায় আপাতত এটি পাওয়া যাচ্ছে না। তবে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ফের স্বমহিমায় ফিরবে কাঁচা আমের শরবত — এমন আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে।

    গরম পড়লে ‘তৃষ্ণার্ত’ মানুষের ভিড়টা একটু বেশিই হয় কলেজ স্কোয়্যারের প্যারামাউন্টে। তবে তার মানে এমন নয় যে, সারা বছর দোকান খালি যায়। ভরা পৌষও এখানকার বিখ্যাত ডাবের শরবতের চাহিদায় বিশেষ প্রভাব ফেলতে পারে না বলেই জানাচ্ছেন দোকানের কর্ণধার পার্থপ্রতিম মজুমদার। ১৯১৮–তে তৈরি এই দোকানও একশো পার করেছে।

    ডাবের শরবত ছাড়াও এই দোকানের ‘ম্যাঙ্গো ম্যানিয়া’, ‘কেসর মালাই’–এর জনপ্রিয়তাও বছরের পর বছর একই রকম রয়ে গিয়েছে। এই সবের পাশাপাশি জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে তেঁতুলের ফ্লেভার দেওয়া ‘ট্যামারিন্ড সিরাপ’।

    অতীত ঐতিহ্য নিয়ে বাঙালির নস্ট্যালজিয়ার শেষ নেই। সেই নস্ট্যালজিয়া রয়েছে একশো পার করা শরবতের দুই বিখ্যাত দোকান নিয়েও। গত একশো বছরের মতো এ বছর এবং আগামী বহু বছর এই দুই দোকান ‘বাঙালি শরবত’ বিক্রি করে তৃষ্ণার্তর তৃষ্ণা হরণ করুক — এমনটাই চান সবাই। তাই তো শুধু শরবতের টানে এই দুই দোকানে আসেন এমন মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়।

  • Link to this news (এই সময়)