• নাম বদলে নকল টিকিট, না-চিনেই ঠকছেন ক্রেতা
    এই সময় | ০৭ মার্চ ২০২৫
  • নীলাঞ্জন দাস, রায়গঞ্জ

    একটা টিকিটেই ভাগ্যবদল। সে জন্য অনেকেই লটারির টিকিট কাটেন নিয়মিত। কিন্তু, টিকিটই যদি জাল হয়? তা হলে নম্বর মেলার সম্ভাবনা নেই। এমনই জাল টিকিটে ছেয়ে গিয়েছে রায়গঞ্জ। জেলা সদরকে কেন্দ্র করে কালিয়াগঞ্জ, হেমতাবাদ, করণদিঘি, ইটাহারে রমরমিয়ে চলছে জাল লটারির কারবার। লাগোয়া দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাতেও ছড়িয়েছে ভুয়ো লটারির জাল। এর ফলে লটারি ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন, ঠকছেন টিকিটের ক্রেতারা।

    অবিকল একই দেখতে টিকিট। সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝাই মুশকিল। সেই টিকিট আসল ভেবে কিনছেন ভাগ্যবদলের আশায় থাকা ক্রেতারা। এ ভাবে জাল টিকিট ছেপে মুনাফা করছে একশ্রেণির কারবারি। তাদের সঙ্গে বোঝাপড়া আছে অসাধু লটারি বিক্রেতাদের। যাঁরা সরকারকে রাজস্ব দিয়ে ব্যবসা করছেন, তাঁরা পড়েছেন ফাঁপরে।

    এ রাজ্যে বিভিন্ন সংস্থার লটারির টিকিট বিক্রি হয়। লটারি টিকিট বিক্রয়কারী সংস্থাগুলির মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় ‘ডিয়ার লটারি’। প্রায় প্রতিটি দোকানেই এই টিকিট পাওয়া যায়। অসাধু কারবারিরা একই টেবিলে ডিয়ারের পাশাপাশি জাল লটারি টিকিটও মিশিয়ে রাখছেন। ‘ডিয়ার’–এর বানান বদলে করা হয়েছে ‘ডর’। কখনও বা ‘ডিয়ার’–এর সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে ‘নর্মদা’, ‘যমুনা’, ‘ইন্দাস’, ‘মেঘনা’ ইত্যাদি শব্দ। পুরো টাকা দিয়ে এই টিকিট কিনে প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতারা।

    লটারি টিকিটের ক্ষেত্রে কমপক্ষে পাঁচটি টিকিটের গুচ্ছ থেকে শুরু হয়ে ২০০টি টিকিটের গুচ্ছ থাকে। জনপ্রিয় সংস্থার টিকিটের মূল্য ছ'টাকা। ফলে টিকিট গুচ্ছের মূল্য ৩০ টাকা থেকে শুরু হয়ে ১,২০০ টাকা পর্যন্ত হয়। এই টিকিটের পুরস্কার ৬০০ টাকা থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রতিদিন লটারির ফলাফল অনলাইনে পাওয়া যায়। জালের ক্ষেত্রেও মূলত দুই ধরনের টিকিট পাওয়া যায়।

    টিকিটের মূল্য ছ’টাকা ও ১২টাকা। এই টিকিটের পুরস্কারমূল্য ৭৫০ টাকা থেকে শুরু হয়ে ৬২,৫০০ টাকা পর্যন্ত থাকে বলে প্রচার করা হয়। তবে এই টিকিটের নিজস্ব রেজাল্ট থাকে না, ‘ডিয়ার লটারি’র সঙ্গেই রেজাল্ট মেলানো হয় বলে সূত্রের খবর। প্রতি টিকিটে আন্দাজে নম্বর বসিয়ে দেয় চক্রের পান্ডারা। রায়গঞ্জের ক্ষেত্রে এই টিকিটগুলি এই শহরেই ছাপানো হয়। হেমতাবাদ, কালিয়াগঞ্জ, ইটাহারের টিকিট ছাপানো হচ্ছে সংশ্লিষ্ট শহরে।

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রায়গঞ্জের এক লটারি ব্যবসায়ী বলেন, ‘জাল লটারির ব্যবসার কথা সবাই জানে। কিন্তু, ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। সাধারণ মানুষ প্রতারিত হচ্ছেন। এতে আমাদের ক্ষতি, সরকারের ক্ষতি।’

    রায়গঞ্জের বাসিন্দা অভিজিৎ মণ্ডল বলেন, ‘আমরা টিকিট কিনে বুঝতে পারছি না, আদৌ কি ঠিক টিকিট কিনলাম! ধন্দে থাকতে হচ্ছে।’ শহরবাসী রতন দে বলেন, ‘পুলিশ–প্রশাসনের এ নিয়ে তৎপর হওয়া উচিত। ক্ষতি সাধারণ মানুষের হচ্ছে।’

    এ বিষয়ে রায়গঞ্জ পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার মহম্মদ সানা আখতার বলেন, ‘অভিযোগের ভিত্তিতে মাঝেমধ্যেই অভিযান চালানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।’

  • Link to this news (এই সময়)