• টিনএজ প্রেগন্যান্সি রুখতে ফের ‘অন্তরা’-র পরামর্শ স্বাস্থ্য দপ্তরের
    এই সময় | ০৭ মার্চ ২০২৫
  • এই সময়, মেদিনীপুর: অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় আইনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে নাবালিকার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। অল্প বয়সে মা হয়ে যাচ্ছে তারা। কিন্তু মা সুস্থ না থাকলে সুস্থ শিশুর জন্ম দিতে পারবে না বলে মত চিকিৎসকদের। তাই টিন এজ প্রেগন্যান্সি আটকাতে ‘অন্তরা’ নামে গর্ভনিরোধক ইঞ্জেকশন দিচ্ছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর।

    স্বাস্থ্য কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিচ্ছেন, যদি বাড়িতে কোনওবিবাহিত কিশোরী থাকে। তা হলে ওই ইঞ্জেকশন নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা। কম বয়সে মা হলে মা ও শিশুর শরীরে কী কী ক্ষতি হতে পারে, তাও বোঝানো হচ্ছে বাড়ির লোককে।

    অন্তরার পথ চলা শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালে। রাজ্যের বিভিন্ন স্বাস্থ্য দপ্তরে বিনামূল্যে এই ইঞ্জেকশন পাওয়া যায়। মেদিনীপুর হাসপাতালেও এই ইঞ্জেকশন মেলে। যেহেতু পশ্চিম মেদিনীপুরে নাবালিকা গর্ভবতীর সংখ্যা বেশি। তাই এখানে ফের এই ইঞ্জেকশন দেওয়া হচ্ছে। পরিসংখ্যান বলছে, এই জেলায় নাবালিকা মায়ের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। যা কাম্য নয়।

    বিবাহিত নাবালিকাদের মধ্যে অনেকেই গর্ভবতী হয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তর। তাই জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের এই উদ্যোগ। তাতে অল্প বয়সে বিবাহিত মেয়েদের অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার সম্ভাবনা আটকানো যাবে। জেলা মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গী বলেছেন, ‘প্রতিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিনামূল্যে এই ইঞ্জেকশন পাওয়া যায়। কোনও বিবাহিত মহিলা সন্তান নিতে না চাইলে এই ইঞ্জেকশন নিতে পারেন।’

    চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এই ইঞ্জেকশন প্রতিদিন নিতে হয় না। তিন মাস অন্তর একটা করে নিলেই প্রেগন্যান্সি আটকানো যায়। সন্তান নিতে চাইলে ইঞ্জেকশন বন্ধ করে দিতে হবে। ইঞ্জেকশন বন্ধের ৭ থেকে ১০ মাসের মধ্যে গর্ভবতী হওয়া যায়। এর কোনও সাইড এফেক্ট নেই। এই ইঞ্জেকশন পরীক্ষিত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। সারা রাজ্যের সঙ্গে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাতেও অন্তরা ব্যবহারের প্রচার হয়েছে। এটি নতুন নয়। প্রশ্ন উঠেছে তা হলে কি বাল্যবিবাহ রোধ করা যাচ্ছে না?

    সৌম্যশঙ্কর বলেন, ‘বাল্য বিবাহের হার খুব বেশি ছিল। ৩০ শতাংশ থেকে এখন কমে হয়েছে ১৬ শতাংশ। তবে বাল্য বিবাহ পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি। বাল্য বিবাহের হার বেশি বলে টিন–এজ প্রেগন্যান্সিও বেশি। তাই নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও নজর এড়িয়ে যাদের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে তারা যাতে অল্প বয়সে গর্ভবতী না হয়ে যায় তাই অন্তরা ইঞ্জেকশনের প্রাচারে জোর দেওয়া হচ্ছে।’ এই ইঞ্জেকশন বিবাহিত টিন এজারদের ক্ষেত্রে খুব জরুরি বলে মত স্বাস্থ্য দপ্তরের। কম বয়সে গর্ভধারণ এবং সন্তান প্রসব করলে ওই মায়েদের নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। সমস্যা হতে পারে শিশুরও।

    পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার এক ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘অনেকে ভাবেন, এ ধরণের ইঞ্জেকশন নিলে ভবিষ্যতে গর্ভধারণে সমস্যা হতে পারে। অনেক জায়গায় স্বাস্থ্যকর্মীদের এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। তবে আগের তুলনায় ‘অন্তরা’ ইঞ্জেকশন নেওয়ার প্রবণতা অনেক বেড়েছে।’

    স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে টিন এজ প্রেগন্যান্সি রুখতে প্রচারও চালানো হচ্ছে। তবে বাল্যবিবাহ রোখা সবার আগে প্রয়োজন বলে মনে করেন স্বাস্থ্য আধিকারিকরা। মেদিনীপুর সদর ব্লকের দেপাড়া এলাকার এক মহিলা বলেন, ‘১৭ বছর বয়সে আমার বিয়ে হয়েছিল। স্বাস্থ্য কর্মীদের কথায় গর্ভধারণ আটকাতে টানা দু’বছর অন্তরা ইঞ্জেকশন নিয়েছি। সেটি বন্ধ করার পরেই অন্তঃসত্ত্বা হয়েছি এবং সুস্থ সন্তানের জন্ম দিয়েছি। কোনও সমস্যা হয়নি।’

  • Link to this news (এই সময়)