• ট্রান্সফর্মার কারখানা গড়ে বাবার স্বপ্নপূরণ করতে চান অভিজিৎ
    এই সময় | ০৭ মার্চ ২০২৫
  • সঞ্জয় চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি

    রাস্তায় বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মার তো সবাই দেখেছেন। কিন্তু এই ট্রান্সফর্মার নিয়ে যে একটা উদ্যোগ গড়ে উঠতে পারে, সেটা আর ক’জন জানেন।

    পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা এই সমস্ত ট্রান্সফর্মার কেনে। বর্ষায় বজ্রপাতের জেরে ট্রান্সফর্মার বিকল হয়ে যায়। বিকল ওই ট্রান্সফর্মার নতুন কিনে আবার বসাতে গেলে অনেক খরচ। পর্ষদ ওই সমস্ত ট্রান্সফর্মার মেরামত করে। ট্রান্সফর্মার মেরামতি চাট্টিখানি কথা নয়। ভিতরে পাতলা তার দিয়ে কয়েক হাজার বিদ্যুতের সার্কিট তৈরি করা থাকে।

    বিশেষ এক ধরনের ফুয়েল থাকে। যেমন স্কুটারে থাকে মবিল। পোড়া মবিল ফেলে দিতে হয়। আর ট্রান্সফর্মারের তেল ফিল্টার করে (রিজেনারেট) ফের ব্যবহার করা হয়। গোটা উত্তর পূর্বাঞ্চলে ট্রান্সফর্মারের এই কাজ হয় শিলিগুড়ির বড়ুয়া অ্যান্ড কোম্পানিতে। তার বাইরে ট্রান্সফর্মার মেরামতি তো আছেই।

    শিলিগুড়ি ছাড়াও মালদা এবং কোচবিহারেও তাই ওয়ার্কশপ গড়তে হয়েছে অভিজিৎ বড়ুয়াকে। প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে প্রায় শতাধিক কর্মী সারাদিন ধরে এই ট্রান্সফর্মার মেরামতি করে চলেছেন। কেননা, ওয়ার্কশপে কেবল তো আর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা মেরামত হয় না। ট্রান্সফর্মার আসে চা বাগান থেকে। এনএইচপিসি থেকে। সেনা ছাউনি থেকে।

    উত্তরবঙ্গে বিদ্যুৎ চালিত ইঞ্জিন চালুর পরে রেলকেও ট্রান্সফর্মার ব্যবহার করতে হয়। ফলে দম ফেলার ফুরসত নেই উত্তরবঙ্গে নিঃশব্দে কাজ করে চলা এই সংস্থার। গড় বার্ষিক ব্যবসা প্রায় তিন কোটি টাকা ছুঁয়েছে। কিন্তু এখানেই থামতে চান না এই উদ্যোগী। ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের কাছে জমি চেয়ে আবেদন করেছেন। নিজেই উত্তরবঙ্গে ট্রান্সফর্মার কারখানা গড়ে তুলতে চান।

    অভিজিৎ বলেন, ‘আমার সৌভাগ্য যে কারখানা চালাতে গিয়ে আমি কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের সমান ভাবে সহযোগিতা পেয়েছি। না-হলে বাবার তৈরি কারখানাকে এই জায়গা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হত না। এ বার ট্রান্সফর্মার তৈরির কারখানা গড়ে তুলতে পারলে হয়তো স্বপ্নপূরণ হতে পারে।’

    অভিজিতের বাবা দিবাকর বড়ুয়া প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে প্রথম ট্রান্সফর্মার মেরামতির কারখানা শুরু করেছিলেন। তখন ছোটখাটো মোটর, ফ্যান মেরামতির কাজ করতেন। শিলিগুড়ির দেশবন্ধুপাড়ার বাড়ির ফাঁকা জমিতেই গড়ে তোলেন কারখানা।

    এর পরে রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদের কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে শুরু হয় ট্রান্সফর্মার মেরামতির কাজ। প্রথমে পর্ষদের ফাঁকা জমিতেই চলত সেই কাজ। পরে কাজ বাড়তে থাকায় নব্বইয়ের দশকে সেই কারখানা চলে আসে সেবক রোডে জেলা শিল্পতালুকে। ২০০৭-০৮ সালে মালদায় এবং ২০১২ সালে কোচবিহারে কারখানা তৈরি হয়। ট্রান্সফর্মারের ফুয়েল রিজেনারেশনের জন্য কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। সেই অনুমতি সহজেই পেয়ে যান তিনি।

    কমার্সের ছাত্র অভিজিৎ কোনও দিন ভাবেননি যে এই পেশায় তাঁকে আসতে হবে। শেষ পর্যন্ত বাবার ইচ্ছেকে সম্মান জানিয়ে কারখানায় যোগ দেন। তবে নিজের ছেলেকে ছোট থেকেই মানসিক ভাবে তৈরি করছেন তিনি। ছেলে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। নিজের ব্যবসায় জুড়ে নিয়েছেন স্ত্রীকেও।

    অভিজিৎ মনে করেন, ‘মূলত সরকারি সহায়তার কারণে উত্তরবঙ্গে এখন শিল্পের পরিবেশ বেশ ভালো। প্রচুর ছোট ও মাঝারি শিল্প গড়ে উঠছে। নতুনদের এই সুযোগকে কাজে লাগানো উচিত।’

  • Link to this news (এই সময়)