শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক। একাধিক সংস্থায় চাকরিও করেছেন। বিভিন্ন এলাকায় ভাড়া নিয়ে থাকেন। স্যুট বুট পরিহিত বছর ৩২-এর যুবককে দেখলে মনে হবে, তিনি কোনও কোম্পানিতে উচ্চপদে কর্মরত। আদতে শিলিগুড়ি হায়দরপাড়া এলাকায় একটি সেলুন চালান। এটা তো তাঁর বর্তমান পেশা। নেশা হলো চুরি। কিন্তু বেশি দিন সব কিছু ঠিকমতো চললো না। অবশেষে শিলিগুড়ি পুলিশের জালে ‘স্মার্ট’ চোর নবনীত কুমার গুপ্তা।
সোনা-রুপোর গয়না এবং নগদ টাকা চুরি করাটাই নেশা ছিল নবনীতের। তবে পুলিশের চোখে ধুলো দিতে মোক্ষম বুদ্ধি করেছিলেন নবনীত। যে কোনও চুরির ঘটনায় তাঁর বাহন হতো দামী বাইক। কাজ মিটলেই ভিন শহরে গিয়ে সেই বাইকটি বিক্রি করে দিতেন তিনি। ফের নতুন বাইক কিনে, ফের চুরি শুরু। স্যুট বুট পরেই চুরি সারতেন তিনি। চুরির পর সিসিটিভি ফুটেজ দেখেও পুলিশের নাগালে আসেনি নবনীত।
পুলিশ জানিয়েছে, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি শিলিগুড়ির প্রধাননগর থানা এলাকায় একটি চুরির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় অভিযুক্তের খোঁজ শুরু করে পুলিশ। সিসি ক্যামেরায় বাইকের ছবি দেখে অভিযুক্তের সন্ধান পায় পুলিশ। দেখা যায় ওই বাইকটি ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা এক ব্যক্তির নামে রেজিস্টার্ড। এর পরেই ওই ঠিকানায় গিয়ে পুলিশ জানতে পারে অভিযুক্ত আদতে ওই এলাকায় থাকেনই না। এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে সেই ‘রেন্ট এগ্রিমেন্ট’ দেখিয়ে বাইক কেনা হয়েছিল। এর পর খোঁজ করতে করতে পুলিশ জানতে পারে অভিযুক্ত হায়দরপাড়া এলাকায় নতুন বাড়ি ভাড়া নিয়েছে।
খবর পেয়েই প্রধাননগর থানার পুলিশ দিন তিনেক আগে ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে। অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্তকারীরা জানতে পারেন গত জানুয়ারি মাসে প্রধাননগর থানার গুরুংবস্তি এলাকায় একটি চুরির ঘটনাতেও অভিযুক্ত জড়িত ছিল। অভিযুক্ত সমস্ত চোরাই সামগ্রী বীরপড়ায় এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করতো। বৃহস্পতিবার বীরপাড়ায় অভিযান চালিয়ে ওই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়। ধৃতের থেকেই সমস্ত চোরাই সোনা, রুপো উদ্ধার হয়েছে।
শিলিগুড়ি পুলিশের ডিসিপি বিশ্বচাঁদ ঠাকুরের বক্তব্য, ‘ওঁর এটাই শখ ছিল। বিভিন্ন জায়গায় চুরি করে। দামী বাইক নিয়ে ঘুরত বলে কারও সন্দেহ হতো না। ও কোনও গ্যাং-এর সঙ্গে ছিল না। একই চুরি করে বেড়াতো।’ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করার পর প্রায় ২৫ লক্ষ টাকার সোনার গয়না উদ্ধার করেছে শিলিগুড়ির প্রধান নগর থানার পুলিশ।