হাজারো সংগ্রামের মাঝেও কর্মের মধ্যেই মুক্তির স্বাদ চেনাচ্ছেন নারীরা। কোনও কাজই তাঁদের পক্ষে অসম্ভব নয় – সেই সত্য প্রমাণ করে চলেছেন নিয়মিত। ‘নারী দিবস’-এর আগে সেরকমই এক নারীর জীবন সংগ্রামের কথা উৎসাহিত করবে আপনাকেও।
সাইকেল চেপে বাড়ির উঠোনে বা বারান্দায় ভোরবেলা সংবাদপত্র দিয়ে যাওয়ার চল রয়েছে বহু জায়গাতেই। তবে কোনও মহিলাকে সেই কাজ করতে দেখেছেন? হয়তো নয়! পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলের নাটশাল গ্রামের বাসিন্দা বীণা কুইতি (৪৫) সেই কাজ করে চলেছেন দীর্ঘ দিন ধরে। ভোর চারটে থেকে শুরু যুদ্ধ। দেশ-বিদেশের খবর নিয়ে বাড়ি বাড়ি সংবাদপত্র পৌঁছে দেন তিনি।
গেঁওখালি থেকে ইচ্ছাপুর বা রজনীগঞ্জ বাজার থেকে শুকলালপুর, সাইকেল চালিয়ে পৌঁছে দেন সংবাদপত্র। চায়ের দোকান হোক বা গ্রামগঞ্জের বাড়ি বাড়ি, সংবাদপত্র পৌঁছে দিচ্ছেন নিয়মিত। ছুটি নেই। কাজ সেরে বাড়ি ফিরতে ফিরতে সূর্য তখন মধ্য গগনে। বাড়ি ফিরেই ছেলে, স্বামীর জন্য রান্নার কাজ শুরু করতে হয়। সংসারে দুই ছেলে ও স্বামী রয়েছে বীণার।
আগে লোকের বাড়ি বাড়ি কাজ করতেন। লকডাউনের পরে সেই কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এ দিকে দুই ছেলেও বড় হচ্ছে। পড়াশুনার খরচ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বাড়ি বাড়ি সংবাদপত্র বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন বীণা। তা দিয়েই আজও সংসার চালাচ্ছেন তিনি। বীণা জানালেন, প্রথমদিকে কিছুটা অস্বস্তি হতো। এখন অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। যাঁদের বাড়ি বাড়ি সংবাদপত্র পৌঁছে দেন, তাঁদের ঘরের মেয়ে উঠেছেন তিনি।
বীণা বলেন, ‘প্রথম দিকে কিছুটা হলেও খারাপ লাগত। কিন্তু ধীরে ধীরে সবাই যে ভাবে আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাতে আমি এগিয়ে চলার শক্তি পাচ্ছি।’ তাঁর পরিশ্রমকে কুর্নিশ জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। শুভ্রা রায় বলেন, ‘আমার বাড়িতে প্রায় তিন বছরের বেশি হল বীণা পেপার দিচ্ছেন । সকাল থেকে খুবই পরিশ্রম করে সংসার চালান। ওঁর লড়াইকে প্রশংসা করার ভাষা নেই আমাদের।’