• লাটাগুড়ির রেশমার টোটোয় গড়াচ্ছে সংসারের চাকা
    এই সময় | ০৮ মার্চ ২০২৫
  • অর্ঘ্য বিশ্বাস, লাটাগুড়ি

    স্কুল জীবনেই সংসারের বোঝা চলে এসেছিল তাঁর উপরে। দীর্ঘ আট বছরের বেশি সময় ধরে সেই গুরুদায়িত্ব বহন করে চলেছেন তিনি। পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে নিজের সব সুখ–স্বাচ্ছন্দ্য বিসর্জন দিয়েছেন। সেই রেশমা খাতুন এখন পুরোদস্তুর টোটোচালক।

    জলপাইগুড়ি জেলার ক্রান্তি ব্লকের যোগেশচন্দ্র চা বাগানে থাকেন রেশমা। ক্রান্তি দেবীঝোড়া স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন। সংসারে ছিল নিত্য অনটন। তবু রেশমার বাবা তাইচুন শেখ চেয়েছিলেন, মেয়েরা পড়াশোনা শিখে স্বাবলম্বী হোক। কিন্তু রেশমা পড়া শেষ করতে পারেননি।

    চার বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। তাই কাজে নেমে পড়েন রোজগারের তাগিদে। তখন তিনি সদ্য তরুণী। কয়েক মাস চা বাগানে অস্থায়ী শ্রমিকের কাজ করেন রেশমা। এরপরে কষ্ট করে একটি পুরোনো টোটো কেনেন। নিজেই শেখেন টোটো চালানো। এখন সেই যানের দৌলতে গড়াচ্ছে রেশমার পরিবারের চাকা।

    টোটো চালিয়ে যেটুকু উপার্জন হয়, তা দিয়ে দুই বোনের বিয়ে দিয়েছেন রেশমা। ছোট বোনটি বিশেষ ভাবে সক্ষম। মা প্রয়াত হয়েছেন, বাবাও যথেষ্ট অসুস্থ। বাবা তাইচুন বলেন, ‘আমি একটা সময়ে চা বাগানে কাজ করতাম। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ি। তাই বাগানের কাজ ছেড়ে বাড়ির সামনে ছোট দোকান দিয়েছিলাম। কিন্তু সেটা ঠিক ভাবে চালাতে পারিনি। ফলে রেশমার ঘাড়ে সব দায়িত্ব গিয়ে পড়ে।’

    সকলের দেখভাল করে আর নিজের জন্য আলাদা কোনও সময় পান না বছর ছাব্বিশের রেশমা। বলেন, ‘সকাল থেকে টোটো চালিয়ে সময় কেটে যায়। দুই বোনকে নতুন ঘর দিতে পেরেছি। ছোটটাকে নিয়ে চিন্তায় থাকি।’

    স্থানীয় বাসিন্দারা সকলেই রেশমার এই লড়াইকে কুর্নিশ জানান। যোগশচন্দ্র চা বাগানের কর্মী নন্দ দাস বলেন, ‘এমন লড়াই ক'টা ছেলেই বা পারে। সত্যি ওঁকে দেখলে অবাক হতে হয়।’

    ক্রান্তি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পঞ্চানন রায়ের আশ্বাস, ‘রেশমার লড়াইয়ের কথা জানি। উনি যাতে সব সুবিধা পান, সেটা আমরা দেখব।’

    রেশমা বলেন, ‘নিজের উপরই বিশ্বাসই সবচেয়ে বড় কথা— সে ছেলে হোক বা মেয়ে। সব বাধাই তা হলে দূর হয়ে যেতে পারে।’

  • Link to this news (এই সময়)