পিনাকী চক্রবর্তী, আলিপুরদুয়ার
ছাত্রজীবনে ছিলেন তুখোড় অ্যাথলিট। আশির দশকে ১০০ মিটার, ২০০ মিটার দৌড় আর লং জাম্পে মাঠ কাঁপাতেন। রোদবৃষ্টি উপেক্ষা করে ক্রস কান্ট্রি দৌড় অনুশীলনের জন্য জাতীয় সড়ক ধরে ছুটতেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। বাড়ির কথা ভুলে কখনও মাঠে, কখনও রাস্তায় থাকা কৃষ্ণার রাজ্য পর্যায়ের বিভিন্ন খেলায় পদক এসেছে অনায়াসে। কৃষ্ণার আদি বাড়ি হুগলির চুঁচুড়ায়।
খেলার সূত্রে বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার সুবাদে তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় আলিপুরদুয়ারের ক্রিকেটার বিশ্বজিৎ চক্রবর্তীর সঙ্গে। সেই কৃষ্ণা এখন ‘সেলাই দিদিমণি’। আলিপুরদুয়ার জংশনের শিববাড়ি এলাকায় রয়েছে তাঁর নিজের স্কুল। এখনও পর্যন্ত পিছিয়ে পড়া তিন হাজার যুবক-যুবতীকে চেন সেলাই, ক্রস-সেলাই, ক্যাচ সেলাই, বুটিক, এপ্লিক শিখিয়ে স্বনির্ভর করেছেন কৃষ্ণা।
ট্র্যাক পরিবর্তন হলো কী করে?
বিশ্বজিতের সঙ্গে ঘর সংসার শুরু করার পরে পাকাপাকি ভাবে চলে আসেন আলিপুরদুয়ারে। মা–হওয়ার আনন্দের মাঝে আচমকা গর্ভপাত। ভেঙে খান খান হয়ে যান ছিপছিপে স্প্রিন্টার। স্বামীর পরামর্শে চলে যান চুঁচুড়ায়। মন খারাপকে ছুটি দিতে শুরু হয় সেলাই শেখা।
ছ’মাসেই সেলাইয়ের রকমারি জাদু হাতের মুঠোয় নিয়ে আসেন কৃষ্ণা। এরপর আলিপুরদুয়ার জংশনে ফিরে যান নিজের বাড়িতে। বেকার যুবক-যুবতীদের স্বনির্ভর করার লক্ষ্য নিয়ে একটি অবৈতনিক সেলাইয়ের স্কুল খুলে ফেলেন তিনি। ততদিনে স্বামী রেলে চাকরি পেয়ে গিয়েছেন।
স্ত্রীর আব্দার মেটাতে বেতনের বেশিরভাগটাই চলে যেত ওই সেলাই স্কুলের সরঞ্জাম কিনতে। হালে আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসক আর বিমলা কৃষ্ণার ওই অবদানের কথা জানতে পেরে তাঁকে ‘উৎকর্ষ বাংলা’ প্রকল্পে যুক্ত করেছেন।
কৃষ্ণা বলেন, ‘আমার জীবনে অনেকগুলো বাঁক আছে। গর্ভপাত হয়ে যাওয়ার পরে শোকে, দুঃখে প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিলাম। আমার জীবনকে অন্য খাতে বইয়ে দিতে লড়াই করতে শিখিয়েছেন স্বামী। আমি ভাবলাম, সংসারে তো অভাব নেই। তা হলে সমাজের পিছিয়ে পড়া যুবক-যুবতীদের স্বনির্ভর করে তুলতে বাধা কোথায়?’ তারপর সেই যে শুরু করলেন, তিন হাজার যুবক-যুবতীর প্রশিক্ষণ দিয়েও এখনও ‘দৌড়’ থামাননি কৃষ্ণা।