অয়ন ঘোষাল: দেশ জুড়ে রেশন ধর্মঘটের হুঁশিয়ারি রেশন ডিলারদের। পয়লা এপ্রিল তারা নয়াদিল্লি অভিযান করবে। জানা যাচ্ছে, রেশন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের ব্যাপারে সেখানে তারা আলোচনা করবেন। কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রথমে আধার কার্ডের সঙ্গে রেশন কার্ডের লিঙ্ক করতে হবে। তারপর মোবাইল নম্বরের সঙ্গে লিঙ্ক করতে হবে এবং সর্বশেষে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে লিঙ্ক করতে হবে।
২৮ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় খাদ্য সচিব সঞ্জীব চোপড়া মিটিং করেন দেশের সব রাজ্যের খাদ্য সচিবের সঙ্গে। সেখানেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় আধার কার্ড, মোবাইল লিঙ্কের পরে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গেও লিঙ্ক করতে হবে রেশন কার্ডকে। ভর্তুকির টাকা সরাসরি গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে প্রশাসন। কেন্দ্র এবং রাজ্যের দেওয়া দুই ধরনের রেশন ব্যবস্থার কারণে এই পরিকল্পনা করা হয়েছে।
নারীদিবস উপলক্ষ্যে আমাদের বিশেষ প্রতিবেদন- Women's Day 2025 | দুর্গা নারী, কিন্তু পুজোটা পুরুষদের, তাই হয়তো ভয় লাগে : অদিতি | আলোর ৬টা
কেন্দ্র দিচ্ছে প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ অন্ন যোজনা। রাজ্য দিচ্ছে খাদ্য সাথী প্রকল্প। এবার আর ফেয়ার প্রাইস নয়, ওপেন মার্কেট সেলস স্কিমে গ্রাহককে সামগ্রী কিনতে হবে। এরপর তিনি তার ভর্তুকির টাকা তার অ্যাকাউন্টে পেয়ে যাবেন। ঠিক যেমন এখন রান্নার গ্যাসের ক্ষেত্রে পাওয়া যায়।
বাস্তব অভিজ্ঞতা বলছে অন্য কথা। এই স্কিম পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে বেশ কিছু জায়গায়। জানা যাচ্ছে চন্ডিগড়, পুদুচেরি, লক্ষাদ্বীপ এবং মহারাষ্ট্রে APL গ্রাহকদের এই স্কিম চালু হওয়ার পর সেখানে গণবণ্টন ব্যবস্থা উঠে গেছে। সারা দেশে সেটা ধাপে ধাপে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে এমনই অভিযোগ অল ইন্ডিয়া ফেয়ার প্রাইস শপ ডিলার্স ফেডারেশনের।
যারা দেশের রেশন ব্যবস্থা পরিচালনা করেন তারা এবার প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দিলেন। পয়লা এপ্রিল দিল্লিতে পার্লামেন্ট অভিযান। সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় খাদ্যমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাও অভিযান। তারপর অনির্দিষ্ট কালের জন্য দেশে রেশন ধর্মঘট।
গ্রাহকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট লিঙ্কের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। ভর্তুকির টাকা সরাসরি গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে যাবে এমনটাই যুক্তি কেন্দ্রের। কেন্দ্র এবং রাজ্যের দেওয়া দুধরণের রেশন ব্যাবস্থায় এই পরিকল্পনা করা হয়েছে। এবার ফেয়ার বাজারের প্রাইস নয় খোলা বাজারের দামে কিনতে হবে গ্রাহককে। তারপরে ভর্তুকির টাকা গ্রাহক তাঁর অ্যাকাউন্টে পেয়ে যাবে। আর এই গোটা ব্যবস্থার বিরোধীতা করছেন রেশন ডিলাররা।
রেশন ডিলারদের বক্তব্য রেশন ব্যবস্থার কি আর কোনও প্রয়োজনব থাকবে! কারণ একজন গ্রাহক ফেয়ার প্রাইস বা ভর্তুকিতে জিনিস কিনছেন। তাও নির্দিষ্ট কার্ডের ভিত্তিতেই। কে কত পরিমাণ রেশন পাবেন তা দেখে রেশন নিচ্ছেন। কিন্তু গোটা বিষয়টাই যদি খোলা বাজারের দামের ওপর ভিত্তি করে হয় এবং তারপর তাদের ব্যঙ্ক অ্যাকাউন্ট যেটা রেশন কার্ডের সঙ্গে লিঙ্ক হতে চলেছে তাতে সরাসরি ভর্তুকির টাকা জমা পরে, তাহলে বিষয়টা হয়ে যাবে LPG এর মতো হবে। আমরা প্রত্যেকেই গ্যাস কিনি খোলা বাজার দরেই। কেউ কেউ ভর্তুকির টাকা পান এবং কেউ কেউ তা পায় না। তাহলে এই ব্যবস্থার মধ্যে কি আর রেশন ডিলারদের কোনও অস্তিত্ব রইল না? এরফলে বোঝাই যাচ্ছে রেশন ব্যবস্থা বা গণবন্টন ব্যবস্থা ভেঙে ফেলার চক্রান্ত চলছে।
All India Fair Price Shop Dealers Association সাধারণ সম্পাদক বিশম্ভর বসু বলছেন, ৫,৩৮,৭৬৮ টা রেশন ডিলার আছে সারা দেশে এবং রাজ্যে রয়েছে ২০,২৬৮টা। এই ব্যবস্থার ফলে শুধু আমাদের অবস্থা শুধু যে বিপন্ন তা নয়, আমাদের যারা চাষিভাই তাদেরও অস্তিত্ব একেবারেই বিপন্ন। রেশন ব্যবস্থা যদি কেন্দ্র তুলে দেয়; তাহলে রেশনের জন্য যে চাল, গম, চিনি বা যেকোনও সামগ্রী প্রয়োজন হয় তা আর চাষিভাইদের থেকে কেন্দ্র সংস্থা কিনবে না।
যদি গোটা বিষয়টা যদি Open Maerket এর দিকে চলে যায়, যারা একেবারে চাষিদের থেকে কেনে, তারা আর কিনবে না ফলে গণবন্টন ব্যবস্থাটা একেবারের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে। এই ঘটনার প্রতিবাদেই পয়লা এপ্রিল নয়া দিল্লি অভিযানের ডাক দিয়েছে রেশন ডিলাররা। একইসঙ্গে সংসদ ভবন, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী এবং খাদ্যমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাও অভিযান করবে তারা। সেইদিনই অনির্দিষ্ট কালের জন্য রেশন ডিলাররা ধর্মঘটের ডাক ঘোষণা করবেন।