• ১৬ কোটির ইঞ্জেকশন না মেলায় নিস্তেজ হচ্ছে শরীর, হুইল চেয়ারে বসেই লড়াই জারি ‘আবৃত্তি চ্যাম্পিয়ন’ রূপসার
    এই সময় | ০৮ মার্চ ২০২৫
  • ধীরে ধীরে নিস্তেজ হচ্ছে শরীর। কোটি কোটি টাকা দিয়ে মেয়ের জন্য জীবনদায়ী ইঞ্জেকশন কেনার ক্ষমতাই নেই বাবা-মায়ের। হুইল চেয়ারে বসেই ‘আবৃত্তি চ্যাম্পিয়ন’ রূপসা জোরালো গলায় বলছে, ‘আমিই সেই মেয়ে…’।

    মেদিনীপুর শহরের বল্লভপুর এলাকার বাসিন্দা সৌমেন মুখোপাধ্যায় এবং সান্ত্বনা মুখোপাধ্যায়ের একমাত্র মেয়ে দশ বছরের রূপসা। ২ বছর বয়সেই জানা যায়, বিরল রোগ ‘স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি’ বা এসএমএ-তে আক্রান্ত সে। এই রোগে আক্রান্তদের স্পাইনাল কর্ড (শিরদাঁড়া) ধীরে ধীরে বেঁকে যায়, পরে নিস্তেজ হয়ে পড়ে গোটা শরীর। জীবনদায়ী ওষুধ না পেলে হুইল চেয়ারেই কাটাতে হয় গোটা জীবন। আর রোগের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন কয়েক কোটি দামের বিদেশি ইঞ্জেকশন। বর্তমানে তার দাম প্রায় ১৬ কোটি টাকা। সৌমেন একটি সোনার দোকানের কর্মী। নিম্ন মধ্যবিত্ত মুখোপাধ্যায় পরিবারের পক্ষে সেই ইঞ্জেকশন কেনা একপ্রকার অসম্ভব।

    জীবনদায়ী সেই ইঞ্জেকশন মেয়ের জন্য কিনতে পারেনি বাবা-মা। ১০ বছরের রূপসা হুইল চেয়ার ব্যবহার করতে বাধ্য হলেও থামেনি তার স্বপ্নের দৌড়। মেদিনীপুর টাউনের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী সে। ক্লাসে প্রতি বছর প্রথম হয়। আবৃত্তিতেও সে চ্যাম্পিয়ন। সম্প্রতি প্রাথমিকের জেলা বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতাতেও আবৃত্তিতে দ্বিতীয় হয়েছিল সে।

    মেয়ের এই হার না মানার অদম্য জেদে চোখে জল মা সান্ত্বনার। আনন্দের অশ্রু গোপন না করে তিনি জানান, তিনি শিক্ষিকা হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু এখন মেয়ের খেয়াল রাখতেই দিনের অধিকাংশ সময় ব্যস্ত থাকেন তিনি। ফিজিওথেরাপি থেকে শুরু করে মেয়ের আবৃত্তি, গানের ক্লাস, সব দিয়ে নজর রাখতে হয় সান্ত্বনাকে।

    সৌমেন বলেন, ‘মেয়ের সঙ্গে সঙ্গে ওর মাও একটা লড়াই চালাচ্ছে। এই লড়াইটা বোধহয় একজন মায়ের পক্ষেই লড়া সম্ভব।’ প্রথমে কোনও স্কুল ভর্তি নিতে চায়নি রূপসাকে, দাবি তাঁর বাবা-মায়ের। এরপর ২০২২ সালে তৎকালীন ডিপিএসসি চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দু বিষুই রূপসাকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন এবং একটি হুইল চেয়ার উপহার দিয়েছিলেন। অনলাইনে আবৃত্তি, গান শেখে রূপসা। পাশে বসে থাকেন মা সান্ত্বনা। নারী দিবসের সকালে মা ও মেয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘এ লড়াই চলছে, চলবে। স্বপ্নে কোনওদিন ধুলো-বালি না লাগে।’

  • Link to this news (এই সময়)