• এনআরএস হাসপাতাল থেকে পরীক্ষা ক্যান্সার আক্রান্ত ছাত্রীর
    আজকাল | ০৮ মার্চ ২০২৫
  • মিল্টন সেন,হুগলি: আন্তর্জাতিক নারী দিবসে, এক নারীর অনন্য লড়াই। লক্ষ্য দুরারোগ্য ক্যান্সার জয় করে শিক্ষিকা হয়ে ওঠা। কলকাতার এনআরএস হাসপাতালে বসে পরীক্ষা দিল চন্দনগরের ছাত্রী। কেমো চলার কারণে গতবছর পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হয়নি। এবারেও একই অবস্থা, তবু থেমে থাকেনি। যন্ত্রণায় কাতর হয়েও বসেছে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায়। বর্তমানে হাসপাতাল থেকেই পরীক্ষা দিচ্ছেন চন্দননগরের সুজলি পাত্র। আর সুজলির সেই লড়াইকে কুর্নিশ জানাচ্ছে তাঁর স্কুলের সহপাঠী, শিক্ষিকা, শিক্ষা কর্মী থেকে প্রতিবেশী সকলেই। মাত্র ১১ দিন বয়েসেই তাঁর মাকে হারিয়েছে সুজলি। তারপর চন্দননগর কেএমডিএ পার্ক সংলগ্ন মামার বাড়িতে তাঁর বড় হয়ে ওঠা। তাঁকে বড় করে তুলেছেন তাঁর মামা সত্যজিৎ রায়। পেশায় তিনি জুটমিলের অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক। সুজলির বাবা বর্তমানে দ্বিতীয় বিয়ে করে দায় মুক্ত। তিনি আলাদা সংসারে থাকেন। তবে মাঝে মধ্যে এসে মেয়ের খোঁজ নেন।

    সুজলী চন্দননগর লালবাগান বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী। একাদশ শ্রেণীতে পঠনরত অবস্থায় প্রথম তার অসুস্থতা ধরা পরে। জানা যায় তাঁর ওভারিতে একটি টিউমার রয়েছে। বায়োপসি করে দেখা যায় ক্যান্সার হয়ে গেছে। এরপরই শুরু হয় কেমো থেরাপি। মাধ্যমিকে প্রথম বিভাগে পাশ করেছিলেন সুজলি। অসুস্থতার কারণে গতবছর তাঁর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বসা সম্ভব হয়নি। তবে তাঁর মনের জোর হারাননি। লক্ষ্য ছিল উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া। সেই অনুযায়ী চলছিল প্রস্তুতি। এবারে তাঁর পরীক্ষার সিট পড়েছিল চন্দননগর কৃষ্ণভাবিনি নারী শিক্ষা মন্দিরে। প্রথম দিন বাংলা পরীক্ষা দেওয়ার পর থেকেই আবার অসুস্থতা তাঁকে পেয়ে বসে। তারপর সারারাত পেটে যন্ত্রণায় ঘুমতে পারেননি। এদিন লালবাগান স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা অর্পিতা মন্ডল জানিয়েছেন, তাঁকে ফোন করে শরীর খারাপের কথা জানিয়েছিল সুজলি। ফলে আর পরীক্ষায় বসতে পারবে কিনা তা নিয়েও দ্বিধা তৈরি হয়েছিল। স্থানীয় চিকিৎসক দ্রুত হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। দ্বিতীয় দিনের পরীক্ষা স্কুলেই দিয়েছিল।

    প্রধান শিক্ষিকা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের হুগলি জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক শুভেন্দু গড়াই এর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারপরই সুজলিকে নীলরতন সরকার হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়। ছাত্রী জানায় হাসপাতাল থেকেই পরীক্ষা দেবে। তারপরই সেইমতো সব ব্যবস্থা করা হয়। প্রধান শিক্ষিকা বলেছেন, অসম্ভব মনের জোর সুজলীর। চরম শারীরিক অসুস্থতা সত্বেও সে স্কুলে আসত। পড়াশোনায় ভালই মনোযোগই ছিল। গতকাল পরীক্ষার পর কথা হল। বলল খুব যন্ত্রণা হচ্ছে। তাও পরীক্ষা শেষ করেছে।বড় হয়ে শিক্ষিকা হতে চায়। তিনিও চান ও বড় হোক। প্রতিবেশী অনামিকা সরকার জানিয়েছেন, ছোট থেকে মা নেই মেয়েটার। মামা দিদিমার কাছে মানুষ। দিদিমাও কিছুদিন আগে গত হয়েছেন। অনেক প্রতিকুলতার মধ্যে লড়াই করে যাচ্ছে। রোগটা ভালো নয়। তিনি চান দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক সুজলি।ভালো রেজাল্ট করুক।

    এই প্রসঙ্গে হুগলি জেলা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার যুগ্ম আহ্বায়ক শুভেন্দু গড়াই বলেছেন,  অসুস্থতার কারণে গত বছর ওই ছাত্রী পরীক্ষায় বসতে পারেনি। দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত। তখন তাঁর কেমো থেরাপি চলছিল। এ বছরে পরীক্ষায় বসেছে। যে স্কুলে সিট পড়েছিল সেখানে সিক রুমে দুটি পরীক্ষা দেওয়ার পরে আরও অসুস্থ হয়ে পরে। তাকে নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে হয়। তিনি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জিব ভট্টাচার্যকে বিষয়টি জানান।তিনি অনুমতি দেওয়ার পর সব ব্যবস্থা করা হয়। বর্তমানে হাসপাতাল থেকেই পরীক্ষা দিচ্ছে ওই ছাত্রী। ওর মনের জোর আছে। সুজলির সাফল্য কামনা করেছেন শুভেন্দু গড়াই।
  • Link to this news (আজকাল)