তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার ভোটার তালিকা থেকে 'ভূতুড়ে' ভোটার তাড়ানোর যে পণ করেছেন, এবং তারপর গোটা তৃণমূল দল যেভাবে মাঠে নেমে কাজ শুরু করেছে, তার ফলেই নির্বাচন কমিশন তিনমাসের মধ্যে ভোটার তালিকার ত্রুটি সংশোধন করতে উদ্যত হয়েছে বলে দাবি রাজ্যের শাসকদলের। এই ঘটনাকে তৃণমূল নেতৃত্ব মমতার জয় হিসাবেই দেখছে।
অথচ, এই প্রেক্ষাপটেই অন্য একটি ঘটনাক্রম নিয়ে ক্রমশ জলঘোলা হয়েই চলেছে। প্রশ্ন উঠছে, তৃণমূলের অন্দরে সব ঠিক আছে তো? কারণ, আজ তৃণমূল কংগ্রেসের 'সেকেন্ড ইন কমান্ড' অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায় ভূতুড়ে ভোটার সংক্রান্ত যে ভার্চুয়াল বৈঠকের ডাক দিয়েছিলেন, তা একদিন পিছিয়ে গিয়েছে।
তৃণমূল কংগ্রেস সূত্রে অবশ্য দাবি করা হচ্ছে, যেহেতু আগামী ১৪ ও ১৫ মার্চ - এই দু'দিন ধরে দোলযাত্রা এবং হোলি উৎসব রয়েছে, তাই অভিষেকের ওই ভার্চুয়াল বৈঠক ১৫ মার্চের বদলে, তার পরদিন - অর্থাৎ - রবিবার করা হবে।
কিন্তু, প্রথম থেকেই অভিষেকের এই বৈঠক ডাকা এবং তার পরবর্তী ঘটনাক্রম নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে তো বটেই, এমনকী দলের অন্দরেও নানা প্রশ্ন উঠেছে বলে দাবি সূত্রের।
প্রথমত, নেতাজি ইন্ডোরে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের গঠন করে দেওয়া 'ভূত তাড়াও' সংক্রান্ত কোর কমিটির প্রথম বৈঠক ছিল গত বৃহস্পতিবার। মমতার বিশেষ আস্থাভাজন সুব্রত বক্সির নেতৃত্বে সেই বৈঠক হলেও তাতে অভিষেক গরহাজির ছিলেন। তাঁর এই অনুপস্থিতি নিয়ে জল্পনা শুরু হতে না হতেই জানা যায়, ১৫ মার্চ আলাদা করে ভার্চুয়াল বৈঠক করবেন অভিষেক। সেই বৈঠকে জেলা থেকে আসার রিপোর্ট খতিয়ে দেখা হবে। তারপর তা পাঠানো হবে দলনেত্রীকে।
এই সিদ্ধান্তের আগেই অভিষেকের অনুপস্থিতিতে হওয়া কোর কমিটির প্রথম বৈঠকে স্থির করা হয়, ভূতুড়ে ভোটার বাছাই করার জন্য প্রত্যেক জেলায় আলাদা করে ন্যূনতম ১১ সদস্যের জেলা কোর কমিটি গঠন করা হবে।
সূত্রের দাবি, কোর কমিটির ওই প্রথম বৈঠকের একেবারে শেষ লগ্নে নেতৃত্বের কাছে খবর আসে - অভিষেক ১৫ তারিখ আলাদা করে ভার্চুয়াল বৈঠক করবেন। এবং মোবাইলে মেসেজের মাধ্যমে সেই তথ্য কোর কমিটি বাকি সদস্য ও সংশ্লিষ্ট নেতানেত্রীরা পান।
শোনা যাচ্ছে, এই মেসেজ যখন তাঁদের কাছে পৌঁছয়, তখন তাঁদের মধ্যে কেউ-কেউ তৃণমূল ভবনের সিঁড়ি দিয়ে নীচে নামছিলেন, কেউ আবার গাড়িতে উঠে ফেরার পথে ধরেছিলেন! সূত্রের দাবি, বৈঠক সম্পর্কে দলীয় সদস্যদের এভাবে অবগত করার পদ্ধতি নিয়েই নাকি দলের অন্দরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে অন্তত তেমনটাই দাবি করা হচ্ছে।
এদিকে, জেলাস্তরে কোর কমিটি গড়ার বিষয়টি ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই স্থগিত হয়ে যায় স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের নির্দেশে! কারণ, তিনি নাকি এই উপ-কমিটি গঠনের বিষয়ে অবগত ছিলেন না এবং এই বিষয়ে যা করার, তা তিনি নিজেই করতে চান।
এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠেছিল, তাহলে কি আগামী ১৫ মার্চ অভিষেক আর বৈঠক করবেন? সেই বৈঠকে কারা উপস্থি থাকবেন? ... ইত্যাদি। এখন আবার শোনা যাচ্ছে, সেই বৈঠকের দিনক্ষণই পালটে গিয়েছে। এর কারণ হিসাবে তৃণমূল যে ব্যাখ্যাই দিক না কেন, রাজনৈতিক মহলের কৌতূহল তাতে কমবে না। ওই দিনের বৈঠকে কারা যোগ দেন, সেখানে কী আলোচনা হয়, তা জানতে আগ্রহী থাকবে সব পক্ষই। এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।