মৌলানা আবুল কালাম আজ়াদ ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি (ম্যাকাউট) বিটেক-এর চতুর্থ বর্ষের প্রথম সেমেস্টারের রেজ়াল্ট প্রকাশ করেছে ১০ ফেব্রুয়ারি। মালদায় অবস্থিত গনি খান চৌধুরী ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (জিকেসিআইইটি) ম্যাকাউট-এর অধীনস্ত একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। কিন্তু সেই কলেজের চতুর্থ বর্ষের বিটেক পড়ুয়ারা এখনও পাননি সপ্তম সেমেস্টারের রেজ়াল্ট। প্রায় এক মাস পরও রেজ়াল্ট না পেয়ে শুক্রবার বিকাল থেকে কলেজে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। এর পর অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস সাসপেন্ড করে মালদার ওই কলেজ। এমনকি কর্তৃপক্ষের নির্দেশে শনিবার হস্টেল থেকে বেরিয়ে যেতে হয়েছে পড়ুয়াদের। ফলপ্রকাশ সংক্রান্ত জটিলতা ঘিরে একাধিক প্রশ্ন মাথা চাড়া দিয়েছে। কার গাফিলতিতে সেমেস্টারের রেজ়াল্ট এখনও পেলেন না ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের পড়ুয়ারা? সে প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজল এই সময়।
সেমেস্টারের রেজ়াল্ট না পাওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছেন পড়ুয়াদের একাংশ। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষের ভয়ে মুখ খুলতে নারাজ অধিকাংশ পড়ুয়া। এর মধ্যেই নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চতুর্থ বর্ষের এক ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র বলেছেন, ‘রেজ়াল্টের রিভিউয়ের জন্য আবেদনের শেষ দিন পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু আমরা এখনও বিটেক-এর সপ্তম সেমেস্টারের রেজ়াল্ট পাইনি। সে জন্যই শুক্রবার রাত দেড়টা পর্যন্ত আমরা কলেজের অ্যাকাডেমিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছি। আজ সকালে জানতে পারি কলেজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সকাল ১০টার মধ্যে হস্টেল খালি করে দেওয়ার জন্য আমাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিছু বুঝতে পারছি না। আমাদের ভবিষ্যত অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে।’ কলেজ বন্ধের বিষয়ে জিকেসিআইইটি-র সহকারি রেজিস্ট্রার দেবনিক মজুমদার বলেছেন, ‘প্রথমে কলেজ বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হলেও পরে সেই বিজ্ঞপ্তিতে পরিবর্তন করা হয়েছে। এখন ক্লাস সাসপেন্ডেড। কিন্তু কলেজ খোলা রয়েছে।’ ছাত্র বিক্ষোভে পরিস্থিতি অশান্ত হওয়াতেই কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তিনি কলেজ বন্ধের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিলেন বলে জানিয়েছেন।
চূড়ান্ত বর্ষের বিটেক পড়ুয়ারা কেন রেজ়াল্ট পাননি তা জানতে এই সময়ের তরফে প্রথমে যোগাযোগ করা হয়েছিল জিকেসিআইইটি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। তখন জিকেসিআইইটি-র ডিন (অ্যাকাডেমিক) কিশোর কুমার দাস বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ করেছি। আমাদের জিকেসিআইইটি-র রেজ়াল্ট বের করার জন্য অনুরোধ করেছি। কিন্তু ওরা সে রকম রেসপন্স দেয়নি।’ এর পর ম্যাকাউট-এর এক আধিকারিককে রেজ়াল্টের বিষয়টি জিজ্ঞাসা করা হয়। ওই আধিকারিক সাফ জানান, জিকেসিআইইটি-র ফ্যাকাল্টিরা ঠিক মতো খাতা দেখেননি। সে জন্যই আটকে রয়েছে ওই কলেজের ফল প্রকাশ। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই আধিকারিক বলেছেন, ‘বিভিন্ন সেমেস্টারের খাতা দেখতে হয় কলেজের ফ্যাকাল্টিদের। কিন্তু জিকেসিআইইটি-র মতো কয়েকটি কলেজের ফ্যাকাল্টিরা ঠিক মতো খাতা দেখার কাজ করেনি। গাফিলতি করেছে। ম্যাকাউটের অধীনে প্রায় ২০০টি কলেজ রয়েছে। তার মধ্যে ৮-১০টি কলেজের রেজ়াল্ট আটকে রাখা হয়েছে। খাতা পুরোপুরি না দেখা হলেও কলেজের কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে চিঠি দিলে আমরা ফল প্রকাশ করে দিই। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তাও করা হয়নি। সে জন্যই এখনও ফল প্রকাশ আটকে রয়েছে। ’
বিশ্ববিদ্যালয় আধিকারিক বক্তব্য জানাতে অবশ্য কিছু সুর নরম করেন জিকেসিআইইটি কর্তৃপক্ষ। নিজেদের গাফিলতির কথাও প্রকারান্তরে স্বীকার করে নেন। এ ব্যাপারে কলেজের অ্যাকাডেমিক ডিন বলেছেন, ‘খাতা দেখা নিয়ে একটা সমস্যা হয়েছিল। আমরা পুরো খাতা দেখতে পারিনি। আমরা জানিয়েছি, পরের বার থেকে এ রকম হবে না।’
তথ্য সহায়তা: স্নেহাশিস নিয়োগী