• কেমো নিতে নিতে শরীর ভেঙেছে, তবু দিদিমণি হওয়ার স্বপ্ন সুজলির চোখে, NRS থেকেই বসল উচ্চ মাধ্যমিকে
    এই সময় | ০৮ মার্চ ২০২৫
  • ক্যান্সার ধরা পড়ার পর কেমোথেরাপি শুরু হয়েছিল। সে কারণে ২০২৪-এ উচ্চ মাধ্যমিকে বসতে পারেনি চন্দননগরের সুজলি পাত্র। এ বছরও পরীক্ষার আগে থেকে শরীরটা খারাপ হচ্ছিল চন্দননগর লালবাগান বালিকা বিদ্যালয়ের ওই ছাত্রীর। এ বার সিট পড়েছে কৃষ্ণভাবিনী নারী শিক্ষা মন্দিরে। সেখানে গিয়েই বাংলা, ইংরেজি পরীক্ষা দেয়। কিন্তু তার পর ফের শরীরটা খারাপ হওয়ায় এনআরএসে ভর্তি করাতে হয়। আপাতত সেই হাসপাতালের বেডে বসেই পরীক্ষা দিচ্ছে সুজলি। এমন লড়াকু, সাহসিনীকে কুর্নিশ জানাতে হয়।

    সুজলির ১১ দিনের দিন মা মারা যান। এর পর বাবা নতুন করে সংসার করেন। সুজলিকে তার দিদা, মামা নিয়ে চলে আসে চন্দননগর কেএমডিএ পার্ক সংলগ্ন বাড়িতে। সেই থেকে মামার বাড়িতেই বড় হয়েছে সে। মামার জীবন এই ভাগ্নি। সেই ভাগ্নির ক্যান্সার ধরা পড়ে, যখন তার ক্লাস ইলেভেন।

    প্রথমে ওভারিতে টিউমার, অস্ত্রোপচারের পর জানা যায় তা ম্যালিগন্যান্ট। মাধ্যমিকে ৬১ শতাংশ নম্বর পেয়েছে সুজলি। কিন্তু মাধ্যমিক পাশের পর থেকেই জীবনে এক নতুন লড়াই শুরু হয় তার। স্কুলের দিদিমণিরা খুবই ভালোবাসে তাকে। তারাই উদ্যোগ নিয়ে এক এনজিও-এর সঙ্গে যোগাযোগ করে চিকিৎসার খরচের ব্যবস্থা করে। ২০২৩ সাল থেকে শুরু হয় কেমো।

    স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা অর্পিতা মণ্ডল জানান, কেমোর কারণে গত বছর বেশ কষ্ট হয়েছিল সুজলির। বমি পেত, শরীর একেবারে দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। পরীক্ষায় বসার জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিল না সুজলি। কিন্তু এ বার পরীক্ষা দেবে বলে পুরোদমে প্রস্তুতি নেয়।

    তবে প্রথম দিন বাংলা পরীক্ষা দেওয়ার পরই আবার অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। রাতভর পেটের যন্ত্রণায় ঘুমোতে পারেনি। তবু ইংরাজিও দেয় পরীক্ষাকেন্দ্রেই। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা অর্পিতা মণ্ডল খবর পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের হুগলি জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক শুভেন্দু গড়াইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কলকাতায় এনআরএসে ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়। এত লড়াই করেও সুজলি চায় দিদিমণি হবে, ছেলেমেয়েদের পড়াবে। আর সেই স্বপ্ন ছুঁতেই সুজলি এ বার পরীক্ষা দিতে বদ্ধপরিকর। তাই হাসপাতালেই তার পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

    হুগলি জেলা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার যুগ্ম আহ্বায়ক শুভেন্দু গড়াই বলেন, গত বছর ওই ছাত্রী পরীক্ষায় বসতে পারেনি। এ বারও যে স্কুলে সিট পড়েছে, সেখানে সিক রুমে বসে পরীক্ষা দিয়েছে দু’দিন। ওর মনের জোরেই ও সফল হবে।

  • Link to this news (এই সময়)