• নিয়মরক্ষার ম্যাচেও জিতে গেল মোহনবাগান, গোয়াকে ঘরের মাঠে হারিয়ে লিগ-শিল্ড হাতে তুলল সবুজ-মেরুন
    আনন্দবাজার | ০৮ মার্চ ২০২৫
  • মোহনবাগান ২ (বরিস-আত্মঘাতী, স্টুয়ার্ট)
    গোয়া ০

    ম্যাচ শুরুর আগে টানেল দিয়ে ফুটবলারেরা বেরিয়ে আসার সময় যুবভারতীর দর্শকাসনের বিভিন্ন কোনা থেকে নামল একের পর এক টিফো। কোনওটায় মোহনবাগান ফুটবলারদের ছবি দিয়ে লেখা ‘দ্য ম্যাগনিফিসেন্ট সেভেন’। কোনওটায় শুভাশিস বসুকে সোনার বল দেওয়ার দাবি। আবার কোথাও ইস্টবেঙ্গলকে খোঁচা দিয়ে লেখা, ‘নিজে যাকে সেরা বলে সেরা সে নয়, দেশ যাকে সেরা বলে সেরা সেই হয়’। শনিবার যুবভারতীতে মোহনবাগানের আনুষ্ঠানিক শিল্ড-জয়ের রাত এমনই বিভিন্ন দৃশ্যে ভরা থাকল। গোয়াকে ২-০ হারিয়ে সেই জয় আরও মধুর করে রাখল মোহনবাগান। আইএসএলের লিগ পর্বের শেষে ২৪ ম্যাচে ৫৬ পয়েন্ট হল তাদের।

    এ দিন বিকেল থেকেই স্টেডিয়ামের আশপাশে উৎসবের পরিবেশ ছিল। সমর্থকদের একের পর এক লরি বাইপাস দিয়ে ছুটছিল। ভেসে আসছিল গগনভেদী চিৎকার, ‘জয় মোহনবাগান’। খাতায়-কলমে ম্যাচের কোনও গুরুত্ব ছিল না মোহনবাগানের কাছে। সমর্থকেরা এসেছিলেন লিগ-শিল্ড হাতে তোলার সাক্ষী থাকতে। সেই উদ্দেশ্য পূরণ হল। তবে মাঠেও নাটকের কোনও কমতি ছিল না।

    পয়েন্ট তালিকার দ্বিতীয় স্থানে থাকা গোয়ার বিরুদ্ধে দলে বদল আনার কথা ম্যাচের আগের দিনই জানিয়েছিলেন কোচ হোসে মোলিনা। গোলরক্ষক নামিয়েছিলেন ধীরজ সিংহ মোইরাংথেমকে, চলতি মরসুমে এটাই ছিল যাঁর প্রথম ম্যাচ। জেমি ম্যাকলারেনের জায়গায় ফিরেছিলেন গ্রেগ স্টুয়ার্ট। স্ট্রাইকার হিসাবে দিমিত্রি পেত্রাতোস। শুভাশিস বসুর জায়গায় খেলালেন আশিক কুরুনিয়নকে।

    গোয়ার বিরুদ্ধে আগ্রাসী মেজাজেই শুরু করেছিল মোহনবাগান। বিপক্ষের গোলের সামনে বেশ কয়েক বার পৌঁছে গিয়েছিলেন পেত্রাতোসেরা। তবে গোয়ার জমাট রক্ষণের সামনে বার বার আটকে যাচ্ছিলেন তাঁরা। গোয়াও ছাড়েনি। বাঁ দিক থেকে উদান্তা সিংহ বার বার ঢুকে পড়ছিলেন। বেশ নড়বড়ে দেখাচ্ছিল আশিস রাইকে। অন্তত দু’বার গোলের সামনে পৌঁছেও নিরাশ হতে হয়েছে উদান্তাকে।

    তবু প্রথমার্ধের শেষ দিকে খেলার বিপরীতে গিয়ে বিপক্ষের জালে বল জড়িয়েছিল মোহনবাগান। বরিস সিংহের মিস পাস ধরে মনবীর সিংহ বল দিয়েছিলেন পেত্রাতোসকে। অসি স্ট্রাইকার বল নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে পড়ে যান। সেই বল ধরে বাঁ পায়ের শটে গোল করেন মনবীর। তবে গোলের পরেই রেফারিকে ছেঁকে ধরেন গোয়া ফুটবলারেরা। পেত্রাতোসের হ্যান্ডবল হয়েছে বলে দাবি তোলেন। রিপ্লে-তে পরিষ্কার দেখাও যায় পেত্রাতোস পড়ে যাওয়ার সময় বল তাঁর হাতে লেগেছে। সহকারীর সঙ্গে আলোচনার পর রেফারি গোল বাতিল করে দেন।

    দ্বিতীয়ার্ধে মোহনবাগানের শুরুটা খুব একটা ভাল হয়নি। গোয়া ম্যাচে আরও জমিয়ে বসতে থাকে। উদান্তাকে আটকাতে আশিসকে তুলে দীপেন্দু বিশ্বাসকে নামান মোলিনা। তাতে গোয়ার আক্রমণ কিছুটা কমে। তবে বরিসের শিশুসুলভ ভুল আবার ডোবায় গোয়াকে। নিজেদের অর্ধ থেকে লিস্টন কোলাসোর উদ্দেশে বল ভাসিয়েছিলেন টম অলড্রেড। লিস্টন সেই বল পাওয়ার আগে বরিস তা হেড করে গোলরক্ষককে পাস দিতে গিয়েছিলেন। তবে গোয়ার গোলরক্ষক ঋত্বিক তিওয়ারি তত ক্ষণে বল ধরতে ডান দিকে সরে এসেছিলেন। বরিসের হেড নিজেদের জালেই জড়িয়ে যায়।

    ওই গোলটা যেন মনোবলই দুমড়ে দিয়ে যায় গোয়ার। লড়াই করেও এ ভাবে গোল করে ম্যাচে ফেরা কোনও দলের কাছেই সহজ কাজ নয়। গোয়াও পারেনি। দু’-একটা আক্রমণ করলেও মোহনবাগান রক্ষণের অসুবিধা হয়নি তা সামলাতে। উল্টে ম্যাচের দিকে আরও একটি গোল খায় গোয়া। মোহনবাগান রক্ষণ থেকে ভাসানো বল ক্লিয়ার করতে পারেননি সন্দেশ জিঙ্ঘন। সেই বল কেড়ে নেন জেসন কামিংস। বল ধরে ঠান্ডা মাথায় জালে জড়ান স্টুয়ার্ট।

    অন্য দিন ম্যাচ শেষ হলেই বাড়ি ফেরার পথ ধরেন সমর্থকেরা। এ দিন তা হল না। ষাট হাজার দর্শক ঠায় বসে থাকলেন মাঠে। শেষ বাঁশি বাজার আগেই গ্যালারিতে জ্বলে উঠল মশাল। প্রিয় দলের হাতে লিগ-শিল্ড ওঠার দৃশ্য দেখার অভিজ্ঞতা হাতছাড়া করতে চাইলেন না কেউ।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)