এক সময় যিনি ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছায়াসঙ্গী, এখন সেই সোনালী গুহই খাতায়-কলমে রাজ্য়ের প্রধান বিরোধী দল বিজেপির সদস্য। যদিও বাংলার রাজনীতিতে তাঁকে আর সেভাবে সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যায় না। এবার সেই সোনালীই মুখ খুললেন সংবাদমাধ্যমে। একের পর এক বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন একদা তাঁর নেত্রী মমতার বিরুদ্ধে। টেনে আনলেন পশ্চিমবঙ্গের প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রসঙ্গ।
শনিবার টিভি নাইন বাংলা-কে একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দেন সোনালী। সেই সাক্ষাৎকারে নানা প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেন তিনি। যেমন - আইপ্যাক থেকে একুশের ভোটে টিকিট না পাওয়া কিংবা, গত শতাব্দীর ন'য়ের দশকের বানতলা ধর্ষণ কাণ্ড থেকে শুরু করে হালের আরজি কর ধর্ষণ ও খুন - নানা ইস্যুতে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে মমতার বিরুদ্ধেই ক্ষোভ উগড়ে দেন সোনালী।
এমনই নানা কথা বলতে গিয়ে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রসঙ্গ তোলেন সোনালী। জানান, কীভাবে শুধুমাত্র তৎকালীন নেত্রী মমতার কথা শুনে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের গলা টিপে ধরতে গিয়েছিলেন তিনি! তারপরও বুদ্ধদেব তাঁকে কতটা সম্মান দিয়েছিলেন, সংশ্লিষ্ট সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধির কাছে সেই 'কাহিনি' শোনান সোনালী।
তিনি জানান, সেই সময় নানুরে তুমুল বোমাবাজি চলছিল। এলাকায় ঢোকার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছিলেন মমতা। সেই সময় রাজ্যের বিরোধী দলনেতা ছিলেন পঙ্কজ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি মমতার সঙ্গে নানুরেই ছিলেন। আর, সোনালী ছিলেন কলকাতায় - বিধানসভায়।
সোনালী জানান, পঙ্কজ বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের ফোন থেকে সেদিন তাঁকে ফোন করেছিলেন মমতা। জানিয়েছিলেন, বোমাবাজির কারণে এলাকায় ঢুকতে পারছেন না তিনি। এই কথা শুনে সোনালী নাকি এতটাই রেগে গিয়েছিলেন যে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের গলা টিপে ধরতে গিয়েছিলেন!
সোনালীর কথায়, 'আমি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের গলা টিপতে গিয়েছিলাম। কারণ নানুরে মমতা দিদিকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল না। সেই সময় পঙ্কজ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন বিরোধী দলনেতা। উনি তাঁর ফোনে আমায় ধরলেন। আমি বললাম, কী হয়েছে দিদি? তখন উনি বললেন, সোনালী বুদ্ধ ভট্টাচার্যকে ছাড়বি না।'
এরপর সোনালী জানান, তিনি নাকি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে 'এই বুদ্ধ' বলে সম্বোধন করতেন! তা সত্ত্বেও বুদ্ধবাবু তাঁকে সম্মান করতেন এবং সর্বদাই 'আপনি' বলে সম্বোধন করতেন।
সেদিনের ঘটনা সম্পর্কে সোনালী বলেন, 'আমি এই খবর পাওয়ার পর বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে বললাম, এই বুদ্ধ আপনার কমরেডরা বোমাবাজি করছেন। আমাদের নেত্রী ঢুকতে পারছেন না।'
এর পাশাপাশি ফোনে সোনালী মমতাকে বলেন, তিনি কেন পঙ্কজবাবুর সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলছেন না। তখন মমতা তাঁকে বলেছিলেন, 'পঙ্কজের সঙ্গে বুদ্ধবাবুর আঁতাত আছে!'
সোনালী বলেন, 'তারপর বুদ্ধবাবু ওঁর সেক্রেটারি ভাস্কর লায়েকের সঙ্গে কথা বলেন। সেই সময় বুদ্ধদেব লায়েককে প্রশ্ন করেন, সোনালীরা কী বলছেন? ওঁদের নেত্রী নানুরে ঢুকতে পারছেন না?... বুদ্ধবাবু আমায় সম্মান দিতেন। আমার কথা শোনার পর উনি বললেন, দাঁড়ান সোনালী। আপনার নেত্রীকে বলুন ১০ মিনিটের মধ্যে বোমাবাজি বন্ধ হবে।'
সোনালী জানান, সেই ঘটনার পরের দিন নাকি এটাই খবরের কাগজের হেডলাইন হয়েছিল। তাঁর উদ্দেশে বুদ্ধবাবুর বলা সেই উক্তি - 'বুদ্ধবাবু বিরোধী দলের একজন এমএলকে ডেকে বললেন, দাঁড়ান সোনালী আপনার নেত্রীকে বলুন ১০ মিনিটের মধ্যে বোমাবাজি বন্ধ হবে!'
সোনালীর দাবি এতেও নাকি 'মমতাদির গাত্রজ্বালা' হয়েছিল। এমনকী, মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের বিরুদ্ধে বুদ্ধবাবুর নাম জড়িয়ে কুরুচিকর মন্তব্য করার মতো গুরুতর অভিযোগও তুলেছেন সোনালী গুহ!