• টোটো চালিয়ে ‘অতিথি বিচারক’ রাধারানি
    এই সময় | ০৯ মার্চ ২০২৫
  • এই সময়, বহরমপুর: বাড়িতে দিনমজুর স্বামী। মজুরিতে যা আয় হতো, সব টাকা নেশা করে শেষ হয়ে যেত। নুন আনতে পান্তা ফুরোয়—এমন ছিল সংসারের অবস্থা। বাধ্য হন পথে নামতে। কিস্তিতে টোটো কেনেন মুর্শিদাবাদের বহরমপুরের কান্তনগরের বাসিন্দা রাধারানি দাস। বেছে নিলেন যাত্রী নিয়ে গন্তব্যস্থানে পৌঁছে দেওয়ার পেশাকে। বছর পাঁচেক হয়ে গেল এটাই তাঁর রুজিরুটি। আগে ছিল টালির ছাউনি দেওয়া বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘেরা দু’কামরার ঘর। এখন টোটো চালিয়ে বাঁশের বেড়া ভেঙে ইটের গাঁথনি দেওয়া দেওয়াল উঠেছে। দিন শেষে বাড়ি ফিরে সিরিয়াল দেখে মন ভালো করতে রঙিন টিভিও কিনেছেন। ইচ্ছাপূরণে কিনেছেন ফ্রীজ়ও।

    রাধারানির কথায়, ‘স্বামী কোনও কাজ করে না। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না। তাই সংসারের খরচ চালাতে বাধ্য হয়েছি টোটো চালাতে। গত ৫ বছর ধরে টোটো চালিয়ে একমাত্র সন্তানকেও বড় করেছি। টোটো চালিয়ে যা আয় হয়, তাতে সুন্দর করে সংসার চলে যায়।’ প্রতি মাসে টোটো-র কিস্তি মেটানো থেকে সংসারের যাবতীয় খরচ একা হাতে সামাল দেন রাধারানি। নারীদিবসে তাঁর এই লড়াইকে কুর্নিশ জানাল মুর্শিদাবাদ জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষ। ৮ মার্চ শনিবার, অতিথি বিচারক হিসেবে হাজির ছিলেন বহরমপুরের মহিলা টোটো চালক রাধারানি।

    নারীদিবসে এমন সম্মান পেয়ে তিনি আপ্লুত। কথা বলতে গিয়ে গলা দিয়ে আবেগ ঝরে পড়ে তাঁর। বললেন, ‘এমন সম্মান কোনও দিন পাব ভাবিনি। প্রথম বার এরকম বড় মঞ্চে এসে একটু ভয় লেগেছে। তবে লোক আদালতের অন্য সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে মানুষ যাতে ঠিক বিচার পান, সেই চেষ্টা করেছি আমি।’ প্রসঙ্গত, ২০২৫ সালে প্রথম লোক আদালত এ দিন বসেছিল মুর্শিদাবাদ জেলা জজ আদালত চত্বরে জেলা আইনি পরিষেবা কেন্দ্রে।

    জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের সচিব অদিতি ঘোষের কথায়, ‘একজন মহিলা টোটো চালককে অতিথি বিচারক হিসেবে নিয়ে আসা হয়েছে। টোটো চালনার মতো ব্যতিক্রমী পেশাকে যিনি নিজের জীবনের অংশ করে নিয়েছেন, তিনি অবশ্যই নারীর ক্ষমতায়নের প্রতীক। অত্যন্ত সাধারণ একজন মহিলা। তাঁকে সম্মান জানাতেই অতিথি বিচারক হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে।’

  • Link to this news (এই সময়)