সমীর মণ্ডল, কেশপুর
‘মডেল ভিলেজ’ হসেবে তৈরি হচ্ছে স্বাধীনতা সংগ্রামী ক্ষুদিরাম বসুর জন্মভিটের গ্রাম কেশপুরের মোহবনী। রাস্তাঘাট, আলো, পার্ক, পানীয় জল, নিকাশি ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হচ্ছে মোহবনী উন্নয়ন পর্ষদের তত্ত্বাবধানে। কিন্তু এখানেই ছাত্রাভাবে বন্ধ হতে বসেছে ক্ষুদিরাম বসুর নামাঙ্কিত স্কুল।
কয়েক বছর আগে গ্রামে তৈরি হয়েছিল মোহবনী শহীদ ক্ষুদিরাম বসু স্মৃতি মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র। এটি আদতে কেন্দ্রীয় সরকারের সর্বশিক্ষা অভিযানের অধীন মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র। প্রথম দিকে ছাত্রছাত্রী ছিল ভালোই। শিক্ষকও ছিলেন পাঁচ জন। বর্তমানে স্কুলে শিক্ষক সংখ্যা মাত্র তিন জন। শ্রেণি চারটি। তিনজন শিক্ষককে চারটি ক্লাস নিতে হয় এক সঙ্গে।
বর্তমানে পঞ্চম থেকে অষ্টম— চারটি শ্রেণিতে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা খাতায়–কলমে ৩২। তবে প্রতিদিন স্কুলে আসে ১৫ থেকে ১৮ জন। ছেলেমেয়েদের ওই স্কুলে পড়ানোর আগ্রহ নেই অভিভাবকদের। তাঁদের কথায়, ‘কেন আমাদের ছেলেমেয়েদের পাঠাব? শিক্ষকই তো নেই। পড়াশোনা হচ্ছে নাকি!’
বিষয়টি স্বীকার করছেন স্কুলের ভারপ্রাপ্ত মুখ্য সম্প্রসারক শান্তনু বেরা। তিনি বলেন, ‘চারপাশে বড় বড় স্কুল। বাড়ির সামনে স্কুল থাকলে কেউ দূরে পাঠাবে কেন? একদিকে রাণীয়ড় স্কুল। এক পাশে কুয়াই উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আর এক দিকে কোটা স্কুল। পাঁচজন শিক্ষক ছিলাম। দু’জন অবসর নিয়েছেন। নতুন করে আর কোনও নিয়োগ নেই। চারটে ক্লাস পড়াতে তিনজনকে। কোনও রকমে চালাচ্ছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘কোনও একজন শিক্ষক ছূটি নিলে খুব সমস্যা। প্রতিদিন স্কুলে মিড ডে মিল রান্না হয়। অভিভাবকদের বোঝানো হয় ছেলেমেয়েদের এই স্কুলে পাঠানোর জন্য। কিন্তু তাঁদের অনীহা। আমরা আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সব জানিয়েছি।’
কেশপুরের বিডিও কৌশিস রায় বলেন, ‘বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। না জেনে কোনও মন্তব্য করা ঠিক নয়।’ কেশপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি চিত্ত গোরাই বলেন, ‘আসলে ওটা হাই স্কুল করার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র সর্বশিক্ষা অভিযানের অধীনে। এই বিদ্যালয়কে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের আনা আইনি জটিলতা আছে। অভিভাবকদের অনীহা রয়েছে।
কারণ, অভিভাবকেরা চাইছেন না অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ওই স্কুলে পড়িয়ে, নবম শ্রেণিতে আবার ছেলেমেয়েদের অন্য স্কুলে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করার ঝামেলা নিতে। পাশের গ্রামে মাদ্রাসা স্কুলও হয়েছে। ফলে দিনে দিনে পড়ুয়া কমছে। আমরা মোহবনী উন্নয়ন পর্ষদের পক্ষ থেকে চেষ্টা করছি ওই স্কুলটিকে উচ্চ বিদ্যালয়ে উন্নীত করার।’
গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘নামেই মডেল ভিলেজ! না হয়েছে গ্রামের সব রাস্তাঘাট, না হয়ে পাকা ড্রেন। স্কুলে শিক্ষক নেই, ছেলেমেয়েদের পড়াবে কে? স্কুল পর্যন্ত ঢালাই রাস্তাটা পর্যন্ত হয়নি। স্কুলের কিছুটা আগেই রাস্তার কাজ শেষ। বর্ষার সময় কাদা মাড়িয়ে স্কুলে আসতে হয় পড়ুয়াদের। তাই বাবা-মায়েরা ছেলেমেয়েদের অন্য স্কুলে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করছে।’