• ছিল রুমাল, হলো বেড়াল! হালতুর ঘটনায় গ্রেপ্তার আরও ১
    এই সময় | ০৯ মার্চ ২০২৫
  • ঋণ নেওয়ার পরে ১৮ মাস ধরে কিস্তি দিতে পারছিলেন না গ্রাহক। সে কারণে ‘লোন রিকভারি এজেন্ট’ ঘরে ঢুকে পরিবার–সহ ওই ব্যক্তিকে অপমান করে দরজায় তালা দিয়ে দেন। পরিবার নিয়ে পথে বসতে হয় তাঁকে। সেই অপমানে আত্মঘাতী হন তিনি। গত জুলাইয়ে বেঙ্গালুরুর ঘটনা।

    সেই ঘটনার আট মাস কাটতে না কাটতেই এ বারের ঘটনা কলকাতার। ঋণের জালে জড়িয়ে পরিবার–সহ আত্মঘাতী হয়েছেন হালতুর বাসিন্দা সোমনাথ রায়। ঘরের দেওয়ালে তিনজন লোন এজেন্টের নামও লিখে গিয়েছেন তিনি। সেই সূত্রে ২ জনকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে কসবা থানার পুলিশ। রির্জাভ ব্যাঙ্কের কড়া নির্দেশ থাকলেও, নিয়মের ফাঁক দলে এই লোন এজেন্টরা পরিচিত ‘বিজ়নেস করেসপন্ডেন্ট’ নামে।

    হালতুর ঘটনায় ধৃত চঞ্চল মুখোপাধ্যায় এবং সোমশুভ্র মণ্ডল ব্যাঙ্কের নন পারফর্মিং অ্যাসেট অর্থাৎ ঋণের টাকা উদ্ধারের কাজ করেন। পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে, যাঁর যেখানে দুর্বলতা, তা জেনে নিয়ে টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করেন এজেন্টরা। যেমন, সোমনাথের ছেলে রুদ্রনীল রায়ের শারীরিক সমস্যার বিষয়টি জানতেন দু’জন।

    টাকার সমস্যা থাকলেও পাড়ায় সুনাম ছিল ওই অটো চালকের। সেই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তিন এজেন্ট পাড়ায় গিয়ে চরম অপমান করতে ছাড়েননি সোমনাথকে। ঘটনার দিন তিনেক আগেও হুমকি দিয়ে চরম হেনস্থা করা হয় তাঁকে। সেই অপমান সহ্য করতে না পেরে সপরিবারে আত্মহত্যার মতো ঘটনা বলে ধারণা তদন্তকারীদের।

    বছরের পর বছর দেশ জুড়ে এমন অভিযোগ উঠতে থাকায় রির্জাভ ব্যাঙ্ক আগেই নির্দেশিকা জারি করে জানিয়েছে, কোনও গ্রাহক ঋণের টাকা দিতে না পারলে বাড়িতে লোক পাঠিয়ে হুমকি বা মারধর করা যাবে না। ভুক্তোভোগীদের অভিযোগ, এখন সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক বা ফিন্যান্স কোম্পানির ‘বিজ়নেস করেসপন্ডেন্ট’ হয়ে ঋণের কিস্তির টাকার দরবার করতে আসেন অনেকে। হুমকিও দেওয়া হয়।

    সূত্রের খবর, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বেসরকারি ফিন্যানশিয়াল কোম্পানিগুলিতে ঋণের সুদ বেশি। এবং চড়া সুদে লোন নিতে গিয়ে পরে আর কিস্তি শোধ করতে পারেন না গ্রাহকরা। এরপর ফিন্যানশিয়াল সংস্থাগুলো খাতায়–কলমে বিজ়নেস করেসপন্ডেন্ট পাঠান। বাস্তবে তাঁরাই লোন রিকভারি এজেন্ট। লোন আদায় করে দিতে পারলে মোট টাকার ১ থেকে ২ শতাংশ কমিশন তাঁরা পেয়ে থাকেন। হালতুর ঘটনার সূত্রে এমনই তথ্য পেয়েছে পুলিশ। সোমনাথও বেসরকারি সংস্থা এবং অ্যাপের মাধ্যমেও ঋণ নিয়েছিলেন।

    এই পরিস্থিতির জন্য ব্যাঙ্কের কর্মীর অভাবকেই দায়ী করছেন অ্যাসোসিয়েশনগুলো। অল ইন্ডিয়া ন্যাশনালাইজ়ড ব্যাঙ্ক অফিসার্স কনফেডারেশনের সেক্রেটারি সঞ্জয় দাস বলেন, ‘অস্থায়ী পদে দ্রুত লোক নিয়োগ করতে হবে। তা হলে বেকারদের লোন রিকভারি এজেন্টের কাজ করতে হবে না। অতীতেও ঋণ আদায়ের ঘটনা ঘটেছে। নিয়মের মধ্যে থেকেই তা করেছেন ব্যাঙ্কের ম্যানেজার এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীরা। কর্মীর অভাবেই নানা সমস্যার সূত্রপাত হচ্ছে।’ লালবাজারের এক কর্তা অবশ্য জানিয়েছেন, হুমকি বা মারধর করে টাকা আদায় করা যায় না। কেউ অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

  • Link to this news (এই সময়)