অরূপকুমার পাল, ঝাড়গ্রাম
সরি! ওয়েটিং, অন্য ডেটে আসুন! আপাতত একথায় শুনতে হচ্ছে পর্যটকদের। দোলের টানা তিন দিনের ছুটিতে ঠাঁই নেই অরণ্যসুন্দরী ঝাড়গ্রামে। এ বারও কার্যত পর্যটকদের ঢল নামতে চলেছে বসন্ত উৎসবে। গত কয়েক বছর ধরে শান্তিনিকেতনের বদলে শাল-মহুয়ার ঝাড়গ্রামে ভিড় জমাচ্ছেন পর্যটকরা। যা কিনা মুখে হাসি ফুটিয়েছে জেলার পর্যটন ব্যবসায়ীদের।
জেলার হোম স্টে থেকে শুরু করে হোটেল সর্বত্রই অগ্রিম বুকিং। ফোন করলেই পর্যটকরা শুনতে পাচ্ছেন, ‘ওয়েটিং!’ ১৪ মার্চ থেকে ১৬ মার্চ পর্যন্ত ঝাড়গ্রাম জেলার সমস্ত হোম স্টে, হোটেলের পাশাপাশি বন উন্নয়ন নিগমের ঝাড়গ্রাম, লোধাশুলি, হাতিবাড়ি তিনটি প্রকৃতি পর্যটন কেন্দ্রও অগ্রিম বুকিং সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে।
এছাড়াও রাজ্যের পর্যটন দপ্তরের অধীনে ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্স ১৫ থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত কলকাতা থেকে ঝাড়গ্রাম বেড়াতে আসার প্যাকেজ ট্যুরের দুটি এসি বাসও অগ্রিম বুকিং হয়ে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত শুধুমাত্র একটি সিট খালি পড়ে রয়েছে। নতুন বুকিং করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে ঝাড়গ্রাম ড্রিস্ট্রিক হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন।
কলকাতা থেকে ট্রেনে মাত্র আড়াই ঘন্টায় ঝাড়গ্রামে আসা যায়। ঝাড়গ্রাম জেলা শহরে ঘোড়াধরা পার্কে এবং রবীন্দ্র পার্কে দুটি জায়গায় বসন্ত উৎসব এবারেও পালন হবে। একদা মাওবাদীদের আঁতুড় ঘর ঝাড়গ্রাম এখন পর্যটন শহর হিসেবে গড়ে উঠেছে। উইকেণ্ডের পাশাপাশি পর্যটকের মরশুমেও প্রচুর দেশি-বিদেশি পর্যটক এখানে ঘুরতে আসছেন। অরণ্য সুন্দরী শাল জঙ্গলে ঘেরা ঝাড়গ্রাম, বেলপাহাড়ির পাহাড়, জঙ্গল থেকে শুরু করে সুবর্ণরেখা নদী, আদিম মানবের গুহা, ঘাঘরা, ঢাঙিকুসুমের জলপ্রপাত সব কিছুই দেখতে পাওয়া যায়। যা পর্যটকদের মনকে বারে বারে আকর্ষণ করে। শান্ত জঙ্গলমহলে পর্যটকদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে।
জেলা পর্যটন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ঝাড়গ্রাম জেলায় এখন ১০২টি হোম স্টে এবং হোটেল, গেস্ট হাউস ও কটেজ মিলে ৩৫টি রয়েছে। এই মুহূর্তে জেলায় প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে চার হাজার পর্যটক একসঙ্গে থাকতে পারেন।
ঝাড়গ্রাম ড্রিস্ট্রিক হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শিবাশিষ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘১৩ মার্চ প্রায় আশি শতাংশ পর্যটক আসছেন। ১৪ ও ১৫ মার্চ জেলার সমস্ত থাকার জায়গা অগ্রিম বুকিং রয়েছে। ১৬ মার্চ অর্ধেকের বেশি পর্যটক চেক আউট করবেন। যার ফলে নতুন করে কোনো পর্যটক ফোন করে বেড়াতে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করলে এখন আমাদেরকে ওয়েটিং বলতে হচ্ছে। এরকম প্রায় ৫০ এর বেশি পরিবার দোলে বেড়াতে আসার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন, তাঁদেরকে ওয়েটিং এ বলতে বাধ্য হয়েছি। উনাদেরকে আমরা অন্য তারিখে আসার জন্য জানিয়েছি।’
ঝাড়গ্রাম জেলা পর্যটন দপ্তরের আধিকারিক মহম্মদ আলিম আনসারি বলেন, ‘দোলের টানা তিন দিনের ছুটিতে প্রচুর পর্যটক বেড়াতে আসছেন। পর্যটন মানচিত্রে ঝাড়গ্রাম ধীরে ধীরে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।’ ঘোড়ধরা পার্কে অনুষ্ঠিত হয় ঝাড়গ্রাম জেলা বসন্ত উৎসব।
উৎসব কমিটির সভাপতি অজিত মাহাতো বলেন, ‘বসন্ত উৎসব এবারে এগারো বছরে পা দিল। দুদিনের উৎসবে নাচ-গানের পাশাপাশি কবি-সাহিত্যিক, গুণীজনদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে। প্রায় এক লাখ মানুষের সমাগম হবে বলে আশা করছি। কড়া নজরদারির জন্য পার্কের চারিদিকে সিসিটিভি লাগানো হবে। পার্কের মধ্যে ভেষজ আবির ব্যবহার করা হবে। বাইরের থেকে আবির নিয়ে পার্কে ঢোকা যাবে না। এ ছাড়াও সুস্বাদু খাবারের বিভিন্ন স্টলও থাকবে।’