পিনাকী চক্রবর্তী, আলিপুরদুয়ার
কয়েকদিন আগে বৈকুন্ঠপুর বনবিভাগের আপালচাঁদ জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসা একটি দাঁতালকে উত্ত্যক্ত করার ঘটনা মনে আছে? জলপাইগুড়ির মালবাজারের ওই ঘটনায় তেড়ে যাওয়া পে–লোডারে হাতি ধাক্কা মারলে সে জখম হয়। এখনও তাকে খুঁজে পাননি বনকর্মীরা। বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞদের মত, হাতি–মানুষের সংঘাত কমাতে ধারাবাহিক প্রচার দরকার। না–হলে মানুষের মৃত্যু ঠেকানো যাবে না।
দেশের মধ্যে হাতি-মানুষের সংঘাতে প্রাণহানির ঘটনায় প্রথম স্থান পাওয়া ওডিশার পরেই রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। তৃতীয় স্থানে ঝাড়খণ্ড। কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রকের পেশ করা গত পাঁচ বছরের পরিসংখ্যানে এই তথ্য উঠে এসেছে। যদিও পশ্চিমবঙ্গে বছরে যত সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তার ৯০ শতাংশ উত্তরবঙ্গে ঘটেছে। জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার ও শিলিগুড়ি মহকুমা এলাকায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে সব থেকে বেশি।
বন ও পরিবেশ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিং তাঁর রিপোর্টে মানুষ ও বন্যপ্রাণীর সংঘাত ঠেকাতে একাধিক পদক্ষেপের কথা বলেছেন। এর মধ্যে এলিফ্যান্ট করিডরে হটস্পট চিহ্নিত করে র্যাপিড রেসপন্স টিম, কিউআরটি গঠন করে নজরদারি করার কথা বলা হয়েছে।
হাতির হানায় মারা গেলে আর্থিক ক্ষতিপূরণ ৫ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০ লক্ষ টাকা করার কথা বলেছেন তিনি। চাষের ক্ষেত্রেও বৈচিত্র আনার জন্য বলা হয়েছে ওই রিপোর্টে। ধান–গম–আনাজ চাষ না করে লঙ্কা, লেমন গ্রাসের মতো বন্যপ্রাণী খায় না, এমন কিছু শস্য জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় রোপণ করার কথা বলা হয়েছে।
স্টেট ওয়াইল্ড লাইফ বোর্ড সদস্য ও বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ জয়দীপ কুণ্ডু বলেন, 'বিশেষ কোনও রাজ্যের কথা বলব না। সারা দেশে জঙ্গল এলাকা যে ভাবে কমে আসছে তাতে হাতি–সহ সব ধরনের বন্যপ্রাণীরা আজ বিপন্ন। ফলে নতুন পরিস্থিতিতে বিজ্ঞানভিত্তিক ভাবনাকে সামনে আনতে হবে। আফ্রিকা যেখানে হাতিদের জন্ম নিয়ন্ত্রণে সফল, আমরা পারছি না কেন?
২০১৭ সালে রাজ্যের প্রাক্তন প্রধান মুখ্য বনপাল প্রদীপ ব্যাস ওই বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছিলেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশে ওই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। কী বলছেন প্রদীপ? তাঁর কথায়, ‘২০১৭ সালে হাতিদের জন্ম নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পরীক্ষামূলক পদক্ষেপ করার প্রস্তাব রেখেছিলাম। আমি অদূর ভবিষ্যতের কথা ভেবেই দেশের সব রাজ্যে ওই পরীক্ষা নিরীক্ষা করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। অথচ আইনের গেরোয় তা আটকে যায়। ফলে আজ হাতি-মানুষের সংঘাত চরমে পৌঁছেছে।’
উত্তরবঙ্গের বন্যপ্রাণ শাখার বনপাল ভাস্কর জেভি বলেন, ‘কেন্দ্রের এই পরিসংখ্যান উদ্বেগের। হাতি রাস্তায় বা লোকালয়ে এলে স্থানীয় প্রশাসনকে দিয়ে ১৪৪ ধারা (বিএনএসএসে ১৬৩ ধারা) প্রয়োগ করেও ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। আমরা এলাকা ধরে ধরে প্রচার শুরু করেছি।’