সুমন ঘোষ, খড়্গপুর
কখনও শিশুরা অপুষ্টিতে ভোগে। আবার কখনও দু’মুঠো খাবারও জোটে না। মেটে না খিদে। ক্ষুধার হারে বিশ্বে ভারতের স্থান কোথায়, তা প্রায় সবার জানা। এর মধ্যে শিশুদের পেট চুরির ঘটনাও ঘটে। অর্থাৎ, সরকার থেকে শিশুদের জন্য যে খাবার বরাদ্দ করা হয়, তা তারা পায় না।
অপুষ্টিতে ভুগছে এমন শিশুদের নিয়ে করা সমীক্ষায়, ১২৭টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১০৫-এ। যেটাকে ‘সিরিয়াস’ বলে আখ্যা দিয়েছে গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স।
কিন্তু ভারতের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির কার কী অবস্থান, শিশুদের পুষ্টির কোনও ঘাটতি রয়েছে কি না তার উত্তর খুঁজতেই চার গবেষক গবেষণা শুরু করেন। রাজ্যগুলির সেই অবস্থান তাঁরা চিহ্নিতও করেছেন।
তেলঙ্গানার ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রপস রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর দ্য সেমি আরিড ট্রপিকস’-এর অমৃত পাল, বাঁকুড়া ক্রিশ্চিয়ান কলেজের অর্থনীতি বিভাগের অতনু ঘোষ, মুম্বই আইআইটির ‘কইটা সেন্টার ফর ডিজিটাল হেল্থ’-এর সৌম্য সেনগুপ্ত এবং পুরুলিয়ার সিধো-কানহো-বিরসা ইউনিভার্সিটির অ্যানথ্রোপলজি অ্যান্ড ট্রাইবাল স্টাডিজ়ের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর তথা পাবলিক হেলথ অ্যান্ড নিউট্রিশন রিসার্চের সমীরণ বিশই-এই চার গবেষক এই প্রথম রাজ্যগুলিতে খিদের হার কী, তা জানার চেষ্টা করেছেন।
গবেষক সমীরণ বিশই জানান, মূলত চারটি বিষয়ের নিরিখে এই গবেষণা করা হয়। যার সাহায্যে গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স তৈরি হয়। সেগুলি হলো, জনসংখ্যার কতজন উপযুক্ত পুষ্টি পায় না, কত শিশুর বয়সের তুলনায় ওজন এবং উচ্চতা কম এবং পাঁচ বছরের কমবয়সি শিশুর মৃত্যু।
গবেষণার ফল থেকে জানা গিয়েছে, গবেষকরা যে পাঁচটি রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে ‘অ্যালার্মিং’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন সেগুলো গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, দাদরা এবং নগর হাভেলি ও মেঘালয়। হিমাচল প্রদেশ, লাক্ষাদ্বীপ, জম্মু ও কাশ্মীর এবং মণিপুরের অবস্থা মোটামুটি ভালো বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। আর পশ্চিমবঙ্গ-সহ ২৭টি রাজ্যের অবস্থা গুরুতর।
সমীরণ বলেন, ‘আমরা সমস্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছি, ভারতের পাঁচটি জায়গার অবস্থা ভীষণ খারাপ। আর ২৭টি-র অবস্থা গুরুতর। মোটামুটি অবস্থানে রয়েছে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল মিলিয়ে চারটি জায়গা। এ বিষয়ে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ জরুরি বলে আমরা মনে করছি।’ তাঁর দাবি, ইউনাইটেড নেশন ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বকে খিদেশূন্য বা নো হাঙ্গার অবস্থায় দেখার লক্ষ্য নিয়ে এগনোর কথা বলেছে। সেখানে রাজ্যগুলোর এমন পরিস্থিতি মোটেও কাম্য নয়।
সমীরণ আরও জানান, একজন মানুষকে ঠিক ভাবে বাঁচতে গেলে ন্যূনতম ১৬০০ কিলো ক্যালোরি প্রয়োজন। কম হলেই অপুষ্টি। ওই গবেষক বলেন, ‘ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে অর্গানাইজেশন (এনএসএসও) এ বিষয়ে সার্ভে করে। কিন্তু ২০১২ সালের পরে আর কোনও নতুন তথ্য তাঁদের কাছ থেকে মেলেনি। ফলে ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভের ২০১৫-১৬ সালের রিপোর্ট নিয়েই আমরা কাজ করছি।’