অর্ঘ্য ঘোষ
কোটাসুর শুনলে অনেকেরই মনে হতে পারে পুরাণের কোনও অসুরের নাম। একেবারেই তেমনটা নয়, তবে পৌরাণিক কাহিনির সঙ্গে ভীষণ ভাবে জড়িয়ে রয়েছে এই কোটাসুরের নাম। বীরভূমের বুক চিড়ে বয়ে গিয়েছে ময়ূরাক্ষী নদী। তারই তীর ঘেঁষা প্রাচীন জনপদের নাম কোটাসুর। ময়ূরেশ্বর থানা এলাকার মধ্যে পড়ে এই জনপদ। কথিত আছে, রাজা ও অসুর— এই দুই নিয়ে কোটাসুর। এখানকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি, এই কোটাসুরে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা হোক।
ময়ূরেশ্বর থানার প্রাণকেন্দ্র বলা হয় এই কোটাসুরকে। এখানে ব্লক, কৃষি দপ্তর, ভূমি রাজস্ব-সহ বিভিন্ন সরকারি অফিস রয়েছে। কোটাসুরের নামের উৎপত্তি নিয়ে নানা মুনির নানা মত শোনা যায়। অনেকে বলেন, মহাভারতের একচক্র নগরীর অন্তর্ভূক্ত ছিল কোটাসুর। এই একচক্র রামপুরহাট শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি গ্রাম।
আবার কথিত আছে, মহাভারতের সময়ে কোটাসুর থেকে বীরচন্দ্রপুর পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকা মহাভারতের একচক্রা ধামের অর্ন্তভুক্ত ছিল। এখানে পাণ্ডবরা ও কুন্তী অজ্ঞাতবাসের সময়ে ছিলেন। কোটাসুরের মদনেশ্বর শিবমন্দির তারই সাক্ষ্য বহন করে চলেছে বলে দাবি অনেকের। মদনেশ্বর মন্দির প্রাঙ্গণে একটি প্রস্তরখণ্ড আছে, যা বকাসুরের হাঁটুর মালাইচাকির ফসিল হিসাবে দাবি করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। একই সঙ্গে ওই চত্বরে রয়েছে প্রদীপের আকৃতির আরও একটি উপলখণ্ড, যা কুন্তীর প্রদীপ হিসেবে ধরা হয়। অনেকে বলেন, স্থানীয় দেবীদহে স্নান করে মাতা কুন্তী এই মন্দিরে এসে প্রদীপ জ্বালিয়ে পুজো দিতেন।
আবার গবেষকরা বলেন, কোটাসুরে নাকি এক সময়ে রাজা ও অসুরের বাস ছিল। সে সময়ে কোটেশ্বর নামে এক রাজা ছিলেন, যাঁর রাজধানী ছিল কোটাসুর। কোটেশ্বর রাজার আরাধ্য দেবতা ছিলেন মদনেশ্বর শিব। এখনও সেই মন্দির রয়েছে কোটাসুরে। আবার এমনও শোনা যায়, এখানে দুর্ম্মদ বা দুর্জয় সেন নামে এক রাজা ছিলেন। সে সময়ে দুর্জয় কোট নাম ছিল কোটাসুরের। অসুরের সেই কোট বা দূর্গ থেকেই কোটাসুরের নাম।
তবে শুধু পুরাণ বা লোকমুখেই কোটাসুর নিয়ে নানা কথা ফেরে না, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনাতেও বাউলপুকুর, অমরকুণ্ডার মাঠের উল্লেখ রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক তথা লোকসংস্কৃতি গবেষক আদিত্য মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘জনশ্রুতি অনুযায়ী কোটাসুর বহু প্রাচীন জনপদ। কোটাসুরে এখনও রাজবাড়ির প্রাচীরের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে।’
কোটাসুরকে ঘিরে তাই এখানে একটা পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা হোক, এলাকার বাসিন্দাদের বহু দিনের দাবি। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি রয়েছে অন্য সুযোগ সুবিধাও। তার পরেও কোটাসুর অবহেলিত বলে অভিযোগ এলাকার লোকজনের। হাওড়া-রামপুরহাটগামী যে কোনও ট্রেনে সাঁইথিয়া নেমে বাস, টোটো বা অটোতে কোটাসুর যাওয়া যায়। কলকাতা থেকে সিউড়ি, বহরমপুরগামী বাসেও যাওয়া যায়। যদিও স্থানীয় বিধায়ক অভিজিৎ রায় জানান, এখনও এ নিয়ে তাঁর কাছে কোনও আবেদন আসেনি। স্থানীয় বাসিন্দারা লিখিত ভাবে জানালে তিনি সংশ্লিষ্ট মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন।