প্রসেনজিৎ সর্দার: কামড় দিয়েছে সাপ। সাপের বিষ নামাতে আক্রান্তকে দুধ খাওয়ালেন রোগীর পরিবার! এই আধুনিক যুগেও এমন হয়? বিষধর সাপ কামড় দিলে নিরাময়ের জন্য একমাত্র এভিএস প্রয়োজন! সেখানে দুধ? দুধ খাইয়ে রোগীকে সুস্থ করার প্রয়াস? এমন আশ্চর্যজনক ঘটনাটি ঘটেছে বারুইপুর থানার অন্তর্গত বৃন্দাখালি পঞ্চায়েতের দমদমা গ্রামে। বর্তমানে সাপের কামড়ে আক্রান্ত যুবক অবশ্য ক্যানিং মহাকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
কী ঘটেছিল? জানা গিয়েছে, দমদমা গ্রামের যুবক প্রীতম মণ্ডল শ্বশুরবাড়িতেই ছিলেন। সেখানে বন্ধুদের সঙ্গে বসে গল্পগুজব করছিলেন। সেই সময়ে তাঁর ডান পায়ে একট সাপ কামড় দেয়। অন্ধকারের মধ্যে এমন ঘটনা ঘটায় চিৎকার করে ওঠেন প্রীতম। বন্ধুবান্ধবরা দৌড়ে যায়। তাঁরা জানতে পারেন, প্রীতমকে সাপে কামড় দিয়েছে। তড়িঘড়ি ওই যুবকের পায়ে কষে বাঁধন দিয়ে দেন তাঁরা।
এদিকে এই খবর পৌঁছয় ওই যুবকের শ্বশুরবাড়িতে। খবর শোনামাত্র ওই যুবকের শাশুড়ি সাপের বিষ নামানোর জন্য প্রায় লিটার খানেক গরম দুধ বোতলে করে নিয়ে হাজির হন জামাইকে খাওয়ানোর জন্য। এদিকে এলাকার অন্যান্য যুবকরা এক মুহূর্ত সময় নষ্ট করতে রাজি হন না। ডাকা হয় একটি অটো। তবে অটোর মধ্যেই তাঁকে দুধ খাওয়ানো হতে থাকে। তাঁকে দুধ খাওয়াতে খাওয়াতেই সকলে হাজির হন ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে। চিকিৎসকেরা ওই যুবকের ক্ষতস্থান দেখে চিকিৎসা প্রক্রিয়া শুরু করেন। যদিও পরে জানা যায়, ওই যুবককে একটি বিষহীন সাপ কামড় দিয়েছে।
কিন্তু প্রীতমের শাশুড়ি কেন জামাইকে গরম দুধ খাওয়াচ্ছিলেন? শাশুড়ি সুমিত্রা মণ্ডল জানিয়েছেন, 'জামাইকে সাপে কামড় দিয়েছে জানতে পেরে তড়িঘড়ি দুধ গরম করেছিলাম। বেশ কিছুটা দুধ খাইয়েওছিলাম। শুনেছি, সাপে কামড় দিলে দুধ খাওয়ালে সাপের বিষ নেমে যায়। তবে দুধ খাওয়ালে সাপের বিষ নামে না। সেটা হাসপাতালে এসে জানতে পারলাম।'
অন্য দিকে, এমন ঘটনা প্রসঙ্গে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের সর্প বিশেষঞ্জ চিকিৎসক সমরেন্দ্রনাথ রায় জানিয়েছেন, গ্রামের মানুষজন এখনও অনেক অবাস্তব ঘটনায় বিশ্বাসী এবং কুসংস্কারে আচ্ছন্ন। তাঁদের সচেতন করতে হবে। দুধ খাওয়ালে সাপের বিষ কোনও দিনই ক্ষয় হয় না। সাপে কামড় দিলে একমাত্র প্রতিষেধক এভিএস। সেটাই প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে রোগীকে সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া জরুরি।