বিধান সরকার: তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। তার পর ভোট মিটতে ফের তৃণমূলে এসেছিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার সেই রাজীব দেখা করলেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। আজ সকালে কল্যাণের বাড়িতে যান রাজীব। কল্যাণের দাবি, রাজীব বলেছেন ভুল হয়েছে, ক্ষমা করে দাও। অন্যদিকে, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় গোটা বিষয়টিকে সৌজন্য সাক্ষাত বলেই দাবি করেছেন। দাদা কল্যাণ তাঁকে জড়িয়ে ধরেছেন।
একুশের নির্বাচনের আগে বিজেপিতে চলে গিয়েছিলেন ডোমজুড়ের বিধায়ক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, হুগলির প্রবীর ঘোষাল-সহ বেশ কয়েকজন তৃণমূল বিধায়ক। বিজেপির প্রার্থী হয়ে পরাজিত হয়েছিলেন রাজীব-প্রবীর দুজনেই।
মোহভঙ্গ হওয়ায় অনেক আগেই ঘর ওয়াপসি হয়েছিল রাজীবের। সম্প্রতি দলনেত্রীর হাত ধরে আবারও তৃণমূলে ফিরেছেন উত্তরপাড়ার প্রাক্তন বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল।
রাজীব তৃণমূলে ফেরায় তার বিরুদ্ধে ডোমজুড়ে তৃণমূল কর্মীরদের বিক্ষোভ পোস্টারিং হয়েছে। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিক জায়গায় রাজীবের দলে ফেরা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় নিজের জায়গায় রাজীব কোণঠাসা হয়ে পড়েন। তাকে দল দায়িত্ব দিয়ে ত্রিপুরায় পাঠিয়ে দেয়। তারপর ২৪ এর লোকসভা ভোট যায়। তবু কিছুতেই কল্যাণ ও রাজীবকে এক মঞ্চে এক অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি। বলা ভালো রাজীবের সঙ্গে দূরত্ব রেখে চলছিলেন শ্রীরামপুর সাংসদ। শ্রীরামপুর লোকসভার মধ্যেই রয়েছে ডোমজুড় বিধানসভা। সেখানের বিধায়ক কল্যাণ ঘোষের অনুগামীরা রাজীবের বিরুদ্ধে সরব হন। দলের অসময়ের কর্মীদের পাশে দাঁড়ান কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর অনেক সময় গেছে। অবশেষে দুজনের সম্পর্কের বরফ গলল।
রবিবার প্রবীর ঘোষালের সঙ্গেই শ্রীরামপুর গঙ্গা দর্শনে সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে দেখা করতে আসেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। বেশ কিছুক্ষণ দুজনের মধ্যে কথা হয়। পরে বাইরে বেরিয়ে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,আমি দল পরিবর্তন করেছিলাম বলে দাদার অভিমান হয়েছিল। তারপর থেকে একটা দূরত্ব তৈরি হয়। আজকে যখন শ্রীরামপুরে এসেছিলাম তখন মনে হল দাদার সঙ্গে গিয়ে একটু সৌজন্য সাক্ষাৎ করি। দাদা ভাইয়ের সম্পর্কের মধ্যে ভালোবাসাও থাকবে রাগও থাকবে,অভিমানও থাকবে অভিযোগও থাকবে। আজকে দেখা হয়ে খুব ভালো লাগলো। দাদা জড়িয়ে ধরে আলিঙ্গন করলেন। আমরা একই দল করি। আশা করি আগামী দিনে দাদা ভাইয়ের সম্পর্ক অটুট থাকবে। কোর কমিটিতে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় দুজনেই আছেন ।সেই কাজ ভালো হচ্ছে বলে জানান রাজীব।
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,রাজীব দলে জয়েন করেছে অনেকদিন আগেই। দিদি ওকে কিছু কিছু দায়িত্ব দিয়েছে। রাজীব আজকে এসেছিল আমার সঙ্গে দেখা করতে। বলল দাদা ভুল টুল হয়েছে। ক্ষমা টমা করো। ২০২৬ এ নির্বাচন আসছে সবাইকে নিয়ে তো চলতে হবে সবাইকে নিয়েই কাজ করতে হবে। দল কাকে কী দায়িত্ব দেবে সেটা পরের ব্যাপার। আমার সঙ্গে ওর ব্যক্তিগত কোন সমস্যা ছিল না। একটা কষ্ট ছিল তুমি তৃণমূল থেকে কেন চলে গেলে। দল থেকে তো কোন তোমার প্রতি অবিচার হয়নি। এটা আমার একটা অভিমানের জায়গা ছিল। ২০২১ এর নির্বাচনের ঠিক আগে চলে যাওয়াতে নিঃসন্দেহে একটা অসুবিধা হয়েছিল। আমি নিজে পরিশ্রম করে সেই জায়গার রিকভারি করেছি। কিন্তু এখন ওরা ফিরে এসেছে যারা ফিরে এসেছে তাদের দিদি গ্রহণ করেছেন আমি কেন কিছু বলতে যাব। আমার কাছে এসেছে সম্মান দেখিয়ে এটাই অনেক বড় কথা। সবাই ভালো করে কাজ করুক ওরা তো আমার ছোট ভাইয়ের মতো। আমার অভিমান ছিল যে দল তো তোমার বিরুদ্ধে কিছু করেনি, তুমি তো দল থেকে সবই পেয়েছো।তবে ও আমাকে সম্মান করে যেখানেই দেখা হয় প্রণাম করে। যত লোক আসে তত কাজও থাকে।তাই কাজ করতে হবে নতুন পুরনো সবাইকে নিয়ে।