প্রাক্তন এক বিজেপি কর্মীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠল তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার নারায়ণগড় থানার মকরামপুরের ঘটনা। নির্যাতিতার স্বামীর অভিযোগ, রবিবার সকালে এই ঘটনা ঘটে। নির্যাতিতার স্বামী জানান, ইমেলে নারায়ণগড় থানা এবং পুলিশ সুপারের কাছে ধর্ষণের লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি। পাল্টা অভিযুক্ত তৃণমূল নেতার দাবি, একটি বিষয়ে মীমাংসার জন্য দুই মহিলা, এক যুবক এসেছিলেন এ দিন। কথা চলাকালীন হঠাৎই ওই যুবক তাঁর গায়ে হাত তোলেন। অভিযুক্ত তৃণমূল নেতার বক্তব্য, ‘মারধর করার পর ওই যুবক হঠাৎ ভিডিয়ো করতে শুরু করে। বলতে থাকে, আপনি ধর্ষণ করলেন কেন? আমি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।’
বছর চল্লিশের ওই মহিলা এলাকায় সক্রিয় বিজেপি কর্মী হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। তাঁর স্বামীর ওষুধের দোকান। মহিলার অভিযোগ, তিনি বিজেপি করায় তাঁর স্বামীকে নানা ভাবে হেনস্থার মুখে পড়তে হয়। অভিযোগ, মাঝে মধ্যেই স্বামীর দোকানও বন্ধ করে দেওয়া হতো। আর তাতে এলাকার দাপুটে এক তৃণমূল নেতা ইন্ধন দিতেন।
অভিযোগকারীর দাবি, বিজেপি ছাড়লে এ সব থেকে মুক্তি মিলবে বলে জানিয়েছিলেন ওই তৃণমূল নেতা। পরিবারের দাবি, কয়েক মাস আগে বিজেপি নেতৃত্বকে ফোন করে জানিয়ে ওই মহিলা দলের সমস্ত কর্মসূচি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। কিন্তু তার পরও অত্যাচার বন্ধ হয়নি।
অভিযোগ, এরই মধ্যে শনিবার ওই পরিবারকে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা প্রস্তাব দেন, লিখিত ভাবে তাঁকে বিজেপি ছাড়ার কথা জানাতে হবে। সেই মুচলেকা তৃণমূলের কার্যালয়ে এসে জমা দিয়ে যেতে হবে। রবিবার সকাল ১০টায় তাঁর স্ত্রী মুচলেকা নিয়ে তৃণমূলের কার্যালয়ে যান।
স্ত্রী যেতেই ওই তৃণমূল নেতা দরজা বন্ধ করে তাঁর সঙ্গে নোংরা ব্যবহার করে বলে অভিযোগ স্বামীর। স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ তুলেছেন স্বামী। সেই সময়ে তৃণমূলের এক কর্মী ও তাঁর মা সেখানে যান। তারাই তাঁর স্ত্রীকে উদ্ধার করেন এবং তাঁর স্বামীকে জানান।
বিজেপির জেলা সহ সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরি বলেন, ‘যদিও উনি এখন চাপে পড়ে বিজেপি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন, তবু তাঁর স্বামী যখন আমাকে ফোন করেন, আমরা সব রকম সহযোগিতা করি।’
অন্য দিকে তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, ‘আইন আইনের পথে চলবে। আমাদের কাছে অভিযোগ এলে এবং ঘটনার সত্যতা খুঁজে পেলে, আমরা দলগত ভাবেও ওই নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’ মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকারের বক্তব্য, ‘দু’পক্ষের তরফেই অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত শুরু হয়েছে।’
এ দিকে এই ঘটনার প্রতিবাদে রবিবার বিকালে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের মূল প্রবেশপথের সামনে ধর্না-অবস্থান শুরু করে মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা বিজেপি নেতৃত্ব। অন্যদিকে, পুলিশ সুপারের অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখানোয় কোতোয়ালি থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। বিজেপি নেতা-কর্মীদের সেখান থেকে উঠে যাওয়ার জন্য বলেন। এ নিয়ে শুরু হয় তর্কাতর্কি। পরে ৭টা নাগাদ বিক্ষোভ তুলে নেয় বিজেপি। রমাপ্রসাদ গিরি জানান, পুলিশের আশ্বাস পেয়ে অবস্থান তোলা হয়েছে। তবে অভিযুক্তকে দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে।