• সোনঝুড়িতে বসন্তোৎসব পালনে নিষেধাজ্ঞা
    প্রতিদিন | ১০ মার্চ ২০২৫
  • দেব গোস্বামী, বীরভূম: দোলের দিন সোনাঝুরি হাট সংলগ্ন এলাকায় আবির খেলা ও বসন্তোৎসব পালনে নিষেধাজ্ঞা। রবিবার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এমনটাই জানিয়েছে বনদপ্তর। বিজ্ঞপ্তিতে সোনাঝুরি জঙ্গলে আবির খেলা-সহ গাড়ি পার্কিং, ড্রোন ওড়ানো, ছবি তোলার ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তবে হস্তশিল্প ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থেই সোনাঝুরি হাট স্বাভাবিক রাখা হয়েছে। জেলার বনদপ্তরের আধিকারিক রাহুল কুমার বলেন, “বন সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী সোনাঝুরি জঙ্গলে লক্ষাধিক মানুষের সমাগমে কোনভাবেই বসন্তোৎসব বাঞ্ছনীয় নয়। তাই আমরা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে স্পষ্ট করেছি দোলের দিন সোনাঝুরি জঙ্গলে আবির খেলা, গাড়ি পার্কিং, ড্রোন ওড়ানো, ছবি তোলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।”

    ১৪ মার্চ বসন্ত উৎসব। প্রতিবছর রেকর্ড সংখ্যায় ভিড় হয় শান্তিনিকেতনে। সোনাঝুড়ি জঙ্গলে প্রচুর পর্যটক আসেন। চলতিবছরেও দোলের দিন রেকর্ড ভিড়ের আশা রয়েছে। পারদ চড়েছে হোটেল-গেস্ট হাউসের ভাড়াতেও। তবে প্রতিবছর অনেকেই পলাশ গাছ নিধন করে ফুলের মালা গলায় পড়ে ঘুরে বেড়ান বলে অভিযোগ। এছাড়াও লক্ষাধিক মানুষের সমাগমে জঙ্গলের পরিবেশ নষ্ট হয়। সেই কারণেই এই সিদ্ধান্ত বলে মনে করা হচ্ছে। এবার দোলের দিন বিশ্বভারতীতেও হচ্ছে না ঐতিহ্যবাহী বসন্তোৎসব। পরিবর্তে ১১ মার্চ ঘরোয়া ভাবে ক্যাম্পাসের মধ্যেই গৌরপ্রাঙ্গণে পড়ুয়া, অধ্যাপক-অধ্যাপিকা, আশ্রমিকদের নিয়েই বসন্তোৎসব করবে বিশ্বভারতী। যেখানে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে স্থানীয়-সহ দূরদূরান্তের পর্যটকদের।

    সোনাঝুরি হাটে আবির খেলা ও বসন্তোৎসব নিষিদ্ধ ঘোষণা প্রসঙ্গে হাট কমিটির সভাপতি তন্ময় মিত্র বলেন, “বনদপ্তর এবছর নির্দেশ দিয়েছে জঙ্গলে কোনও রকম আবির খেলা বসন্তোৎসব করা যাবে না। দোলের দিন দূরদূরান্তের পর্যটক সহ স্থানীয়দের ভিড় হয়, যানজট তৈরি হয়। লক্ষাধিক মানুষের সমাগমে জঙ্গল নষ্ট হয়। তাই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বনদপ্তর। তবে হস্তশিল্প ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থেই সোনাঝুরি হাট স্বাভাবিক রাখা হয়েছে। সকলে কেনাকাটা করতে হাটে আসতে পারবেন।”

    ২০২৪ সালে স্থানীয় বোলপুর পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের পুর প্রতিনিধি সংগীতা দাসের তত্ত্বাবধানে সোনাঝুরি জঙ্গলে বসন্তোৎসব হয়েছিল। অত্যাধিক ভিড় ও যানজটে নাজেহাল হতে হয়েছিল সকলকেই। বিঘ্নিত হয়েছিল জঙ্গলের পরিবেশ। তাই এবছর বনদপ্তর সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, সোনাঝুরি জঙ্গলে বসন্তোৎসব নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। স্থানীয় বাসিন্দা শম্পা রায় ও ঋতু চট্টোপাধ্যায় জানান, “বিশ্বভারতী বসন্তোৎসব আয়োজন করলেও দোলের দিন নয়। তাছাড়া সর্বসাধারণের প্রবেশাধিকার নেই। সোনাঝুরি হাটেও বসন্তোৎসব হচ্ছে না শুনে খারাপ লাগছে।”

    অন্যদিকে, এদিন গ্রীন অ্যাসোসিয়েশন ফর ক্লিন হ্যবিটেড স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যরা বোলপুর লজ মোড়ে সামনে থেকে শান্তিনিকেতন উপাসনা গৃহ পর্যন্ত পলাশ বাঁচাও  পথযাত্রার মধ্য দিয়ে সতর্কতার বার্তা দেন। জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত তিন শিক্ষক আনোয়ার হোসেন, অরূপ চৌধুরী ও কল্যাণ ভট্টাচার্যরা জানান, “বেশ কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে বসন্ত উৎসবের আগেই পলাশ গাছ নিধন করে ফুলের মালা গলায় পড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন অনেক পর্যটকই। শুধুমাত্র গাছের নিচে থেকে সংগ্রহ করেই পলাশ ফুল ব্যবহার করুন। দয়া করে ডাল, পলাশ ফুল, গাছ নষ্ট করার জন্যই সচেতনতা অভিযান করা হচ্ছে জেলাজুড়েই।”
  • Link to this news (প্রতিদিন)