প্রতি তিনটিতে একটি। রাজ্যে গত এক বছরে নতুন যে উৎপাদন শিল্প ক্ষেত্র (ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রি) তৈরি হয়েছে, তার প্রতি তিনটির একটির মালিক মহিলা। কেন্দ্রীয় সরকারের পরিসংখ্যান ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন মন্ত্রকের প্রকাশ করা সাম্প্রতিক সমীক্ষা রিপোর্টে এই তথ্য সামনে এসেছে। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, মহিলা নিয়ন্ত্রিত শিল্প বাড়ার পাশাপাশি বাড়ছে মহিলাদের কর্মসংস্থানও। সেই বৃদ্ধি পুরুষদের তুলনায় অনেকটাই বেশি। দু’টি ক্ষেত্রেই বাংলার স্থান উজ্জ্বল। মহিলা মালিকানাধীন নতুন শিল্প স্থাপনের ক্ষেত্রে দেশের ২ নম্বরে বাংলা। প্রথম স্থানে কর্নাটক। আর মহিলা কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে ১ নম্বরে বাংলা। দু’টি ক্ষেত্র মিলিয়ে শতাংশের বিচারেও বাংলা রয়েছে ১ নম্বরে।
ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে প্রকাশিত ‘অ্যানুয়াল সার্ভে অফ আনইনকর্পোরেটেড সেক্টর এন্টারপ্রাইজ় ২০২৩-২৪’ রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, সারা দেশে মহিলা মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে ৪ শতাংশ। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২২-’২৩ সালের সমীক্ষায় সারা দেশে মাঝারি ও ছোট ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পে মোট কর্মীদের ২৮.১ শতাংশ ছিলেন মহিলা। ২০২৩-’২৪ সালে সেটা হয়েছে ৩৩.৭ শতাংশ। এ ধরনের সংস্থাগুলোর মধ্যে মহিলা মালিকানাধীন শিল্প হলো ২৬.২ শতাংশ। যা ২২.৯ শতাংশ ছিল ২০২২-’২৩ সালে ।
রাজ্য ভিত্তিক পরিসংখ্যান বিচারে দেখা যাচ্ছে, সারা দেশের নিরিখে পশ্চিমবঙ্গে মাঝারি ও ছোট ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্প ক্ষেত্রে গত বছর মহিলাকর্মীদের নিয়োগ ১২.৭ শতাংশ। যা দেশে সর্বোচ্চ। বাংলার পরে এ ক্ষেত্রে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ (১০.৪ শতাংশ), তার পর মহারাষ্ট্র (৯.৭ শতাংশ)। এর মধ্যে বাংলা ও মহারাষ্ট্রে যথাক্রমে গ্রামীণ এলাকা ও শহর এলাকায় সব চেয়ে বেশি মহিলাকর্মী নিযুক্ত হয়েছেন।
মাঝারি ও ছোট ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্প সংস্থাগুলো ১৯৫৬ সালের এবং ২০১৩ সালের কোম্পানি আইনে নথিভুক্ত হয় না। সে জন্যই ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে থেকে এই ধরনের শিল্পের পৃথক সমীক্ষা করা হয়। মহিলা মালিকানাধীন নতুন সংস্থা তৈরি ক্ষেত্রে প্রথম স্থানে রয়েছে কর্নাটক। সে রাজ্যে নতুন ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্প স্থাপনের হার ৭০.০৪ শতাংশ। তার পরেই রয়েছে বাংলা— ৬৯.৬০ শতাংশ। বাংলায় গ্রামীণ এলাকায় শিল্প স্থাপন বেশি হয়েছে। তার পরেই রয়েছে গুজরাট, কর্নাটক এবং তেলঙ্গানা।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, সারা দেশে ২০২৩-’২৪ সালে তৈরি হওয়া নতুন শিল্পে প্রতি ৪টির সংস্থার একটির মালিক মহিলা। কিন্তু বাংলা, গুজরাট, কর্নাটক এবং তেলঙ্গানায় এক–তৃতীয়াংশ নতুন শিল্পের মালিক মহিলা। কৃষি–নির্ভর শিল্পকে এই হিসেবের বাইরে রাখা হয়েছে। মহিলা কর্মসংস্থান ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে ১২.৮ শতাংশ বেড়েছে। যা এ যাবৎ কালের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত বছর এই বৃদ্ধি ছিল ১০.১ শতাংশ।
সাধারণত দেখা যায়, পুরুষ মালিকানাধীন সংস্থার তুলনায় মহিলা নিয়ন্ত্রণাধীন সংস্থায় মহিলাকর্মী বেশি নিয়োগ করা হয়। সেই কারণেই গত বছরে এ রাজ্যে তো বটেই, সারা দেশে মহিলাকর্মীর রেকর্ড সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটেছে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, মহিলাকর্মী বাড়লে আর্থ–সামাজিক অবস্থার স্থায়ী বৃদ্ধি ঘটে। সে ক্ষেত্রে আগামী বছরগুলোয় বাংলা, কর্নাটকের মতো রাজ্য তার সুফল পাবে।