এই সময়, ময়নাগুড়ি: গলায় টিউমার ধরা পড়েছিল ছেলের। বাবা বিকাশ দাস অন্যের টোটো চালিয়ে সংসার চালান। অসুস্থ ছেলের চিকিৎসা করাতে চড়া সুদে টাকা ধার করেছিলেন তিনি। দরিদ্র বাবার ঋণ শোধ করতে মোবাইল বিক্রি করে ভিন রাজ্যে কাজের সন্ধানে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে গেল নাবালক ছেলে।
জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ির জোরপাকড়ি এলাকার বাসিন্দা বিকাশের দিন আনি দিন খাই অবস্থা। তাঁর ছেলে সুজনের গলায় টিউমার ধরা পড়ে। ছেলেকে মেখলিগঞ্জে গিয়ে চিকিৎসা করান তিনি। ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে সুজনের গলায় অস্ত্রোপচার হয়। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়িতে এলে তার ওষুধপত্র কিনতেও প্রচুর টাকা পয়সা খরচ হয়। কোনওক্রমে প্রথম দফার ওষুধ জোগাড় করেন নাবালকের বাবা–মা।
বাবা–মা’র এই আর্থিক দুরাবস্থা দেখে দ্বিতীয় দফার ওষুধ কেনার আগে বাড়িতে কিছু না জানিয়েই সে তার মোবাইল বিক্রি করে চেন্নাইয়ের মহালিঙ্গমপুরমে চলে যায়। সেখান তাদের গ্রামের দু’জনের সঙ্গে দেখা করে কাজ জোগাড় করে দেওয়ার কথা বলে। এ দিকে ছেলের খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরতে থাকেন বিকাশ। পরে চেন্নাই থেকে অজয় দাস নামে গ্রামেরই একজন তাঁকে জানান যে, সুজন তাঁদের কাছেই আছে। এরপর বিকাশ ছেলেকে ফিরিয়ে আনতে চেন্নাই যাওয়ার তোড়জোড় শুরু করেন। কিন্তু পরদিনই অজয় আবার ফোন করে জানান, সুজন তাঁদের না জানিয়ে অন্য কোথাও চলে গিয়েছে। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। এরপর থেকে অজয়কে ফোন করা হলে তিনি আর ফোন ধরছেন না বলে অভিযোগ বিকাশের।
এই অবস্থায় রবিবার ছেলের সন্ধান পেতে ময়নাগুড়ি থানার দ্বারস্থ হন তিনি। বিকাশ বলেন, ‘সুজন অপারেশনে পর থেকেই বাইরে কাজে যাবে বলে জেদ করছিল। কিন্তু একে অসুস্থ তার উপর সাবালক না হওয়ায় আমরা বাধা দিয়েছিলাম। কিন্তু গত মাসের ১৪ তারিখে বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে ফোনটি বিক্রি করে চেন্নাই চলে যায়। অপারেশন হওয়ার পর থেকেই ও বলছিল যে, ঋণের টাকা শোধ করতে সে কাজে যাবে। আমাকে যাতে আর সুদ গুনতে না হয় তাই কাজ করবে।’ ময়নাগুড়ি থানার আইসি সুবল ঘোষ বলেন, ‘নাবালকের সন্ধানে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।’