এই সময়: গত ১ মার্চ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে গোলমালের ঘটনায় রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর গাড়ির চালকের সঙ্গে কথা বলল পুলিশ। লালবাজার সূত্রের খবর, শনিবার মন্ত্রীর গাড়িচালকের সঙ্গে একপ্রস্ত কথা বলা হয়। তবে তাঁর বয়ান রেকর্ড করা হয়নি। ১ মার্চ, শনিবার যাদবপুর ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর গাড়ির ধাক্কায় ইংরেজির স্নাতকের প্রথম বর্ষের পড়ুয়া ইন্দ্রানুজ রায় জখম হন বলে অভিযোগ ওঠে।
আদালতের নির্দেশে ইন্দ্রানুজের পাঠানো ই–মেলকেই এফআইআর হিসেবে বিবেচনা করে তদন্ত শুরু করে যাদবপুর থানা। সেই ঘটনাতেই শিক্ষামন্ত্রীর গাড়িচালকের সঙ্গে তদন্তকারীরা জানার চেষ্টা করেন, সে দিন ক্যাম্পাসে ঠিক কী হয়েছিল এবং কোন পরিস্থিতিতে ওই ছাত্র জখম হন।
যাদবপুরের ওই দিনের গোলমালের ঘটনায় সব মিলিয়ে আটটি এফআইআর দায়ের হয়েছে। সেই সব মামলার তদন্তে যাদবপুরের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ভাস্কর গুপ্ত, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ অধ্যাপক তথা তৃণমূল নেতা ওমপ্রকাশ মিশ্র এবং জখম ইন্দ্রানুজের বয়ান নিয়েছে পুলিশ। সূত্রের খবর, খুব শিগগিরই ব্রাত্যর চালকের বয়ান রেকর্ড করা হতে পারে। তবে রবিবার এ বিষয়ে পুলিশের তরফে সরকারি ভাবে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। এই ঘটনায় শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গেও আগামী দিনে কথা বলতে পারেন তদন্তকারীরা।
এ দিকে, শনিবারই ইঙ্গিত মিলেছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা কাটার। পড়ুয়াদের আন্দোলনে ইতি টেনে আপাতত ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রণবকুমার গায়েন আজ, সোমবার সকাল সাড়ে ১১টায় প্রশাসনিক সভা ডেকেছেন। এই বৈঠকে প্রত্যেক ছাত্র সংগঠনের তরফে দু’জন করে প্রতিনিধি উপস্থিত থাকার কথা।
বৈঠকে থাকবেন সহ–উপাচার্য অমিতাভ দত্ত ও বিভিন্ন বিভাগের ডিনরা। থাকবেন ডেপুটি রেজিস্ট্রার–সহ অন্য আধিকারিকরাও। রবিবার ছুটির দিনে কর্তৃপক্ষের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন পড়ুয়ারা। এতদিন আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা দাবি করছিলেন, অন্তর্বর্তী উপাচার্য ভাস্কর গুপ্তকে সশরীরে ক্যাম্পাসে এসে বৈঠক করতে হবে। অসুস্থ থাকায় তিনি অবশ্য ক্যাম্পাসে আসছেন না। এ দিন বিকেলেই হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন তিনি। তবে তাঁর কথায়, ‘সোমবারের বৈঠকে আমি থাকতে পারব না।’
যাদবপুরে চলতি জটিলতা কাটানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতির (ইসি) বৈঠক ডাকতে আজ বেলা ১টা পর্যন্ত কর্তৃপক্ষকে সময় দিয়েছিলেন পড়ুয়ারা। সেই সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই বৈঠক ডাকলেন কর্তৃপক্ষ। তবে সোমবারের বৈঠককে ইসি বলা হচ্ছে না। আন্দোলনরত পড়ুয়াদের তরফে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পড়ুয়া দেবার্ঘ্য জশ বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ আমাদের দাবি মেনে এই বৈঠক ডেকেছেন। তবে আমরা মূল দাবি থেকে সরছি না।’
তাঁর বক্তব্য, ক্যাম্পাসে ছাত্র ভোট করানোর পাশাপাশি অবিলম্বে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রাক্তন পড়ুয়া ধৃত সাহিল আলির মুক্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সেই সঙ্গে কর্তৃপক্ষের তরফে আহত পড়ুয়াদের চিকিৎসার খরচ ও মামলায় জড়িয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীদের আইনি সহায়তাও দিতে হবে। প্রত্যাহার করতে হবে যাবতীয় মিথ্যে মামলা। বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্টস ইউনিটের এসএফআই–র সম্পাদক অভিনব বসুর দাবি, ‘এই ইস্যুগুলির সঙ্গেই ১ মার্চ শিক্ষামন্ত্রীর উপস্থিতিতে যে ভাবে পড়ুয়াদের উপর হামলা চালানো হয়েছিল, তার জন্য শিক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধেও কর্তৃপক্ষকে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।’
এই আবহে আজ বৈঠকের কথা জানিয়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে মেল করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার। তিনি জানান, ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের নির্দেশেই এই বৈঠক ডাকা হচ্ছে। ভাস্কর বলেন, ‘শারীরিক ভাবে আমি ক্লান্ত। অফলাইন বা অনলাইনে বৈঠকে যোগ দেওয়ার মতো শারীরিক অবস্থায় নেই।
ক্যাম্পাসে পঠনপাঠন, পরীক্ষা, গবেষণা সংক্রান্ত স্বাভাবিক অবস্থা ফেরা নির্ভর করছে, সবার সদিচ্ছার উপর।’ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক পঠনপাঠনের পরিবেশ ফেরানো ও শিক্ষাঙ্গনে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখার অনুরোধ জানিয়ে পড়ুয়াদের শনিবার ই–মেল পাঠিয়েছিলেন উপাচার্য। এরপরই সুর নরম করেন পড়ুয়ারা।