মকরামপুরের ঘটনায় উত্তাপ বাড়ছে। যে তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে পার্টি অফিসে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে, তাঁকে নিয়ে কেন এখনও প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি। সোমবার জেলাশাসকের অফিসের সামনে ধরনায় বসতে চলেছে তারা। অন্য দিকে পুলিশের দাবি, প্রাথমিক যে মেডিক্যাল রিপোর্ট, তাতে তেমন কোনও প্রমাণ মেলেনি। মেদিনীপুরের নারায়ণগড়ের মকরামপুর। রবিবার সেখানকার তৃণমূলের দাপুটে এক নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তোলেন এলাকার প্রাক্তন বিজেপি কর্মী। অভিযোগ, চাপ দিয়ে তাঁকে বিজেপি ছাড়তে বাধ্য করেন ওই তৃণমূল নেতা। শুধু তাই নয়, মুখের কথা মানতে রাজি ছিলেন না ওই নেতা। তিনি জানিয়েছিলেন, তৃণমূল পার্টি অফিসে এসে মুচলেকা দিয়ে জানাতে হবে, তিনি বিজেপি ছেড়েছেন।
ওই মহিলার স্বামীর দাবি, রবিবার সকালে সেই মুচলেকা দিতেই তৃণমূলের মকরামপুরের দলীয় কার্যালয়ে গিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী। সেখানেই ওই তৃণমূল নেতা তাঁর স্ত্রীকে ধর্ষণ করেন। বিজেপি ওই তৃণমূল নেতার গ্রেপ্তারের দাবিতে রবিবার বিকালে পুলিশ সুপারের দপ্তরের সামনে অবস্থানে বসে। পরে যদিও পুলিশ তাদের বুঝিয়ে সেখান থেকে তুলে দেয়।
ওই মহিলার স্বামী রবিবার বিকালেই ই-মেল মারফত মেদিনীপুর থেকে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন নারায়ণগড় থানা এবং জেলা পুলিশ সুপারের কাছে। অন্যদিকে, ওই তৃণমূল নেতাকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও নির্যাতিতার সঠিক মেডিক্যাল টেস্টের দাবিতে রবিবার সন্ধ্যায় মেদিনীপুর শহরে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের বাইরে অবস্থান বিক্ষোভে বসেন জেলা বিজেপি-র নেতা ও কর্মীরা। তা ঘিরে উত্তেজনাও তৈরি হয়। পরে অবশ্য পুলিশি আশ্বাসে অবস্থান উঠে যায়।
রবিবার রাত ১০টা নাগাদ নারায়ণগড় থানায় এফআইআর দায়ের হয়। ধর্ষণের ধারা (BNS 64)-তেই এফআইআর দায়ের হয় ওই তৃণমূল নেতা ও তাঁর এক সঙ্গীর বিরুদ্ধে। রাতেই ওই মহিলার মেডিক্যাল টেস্টও হয়।
সোমবার সকালে জেলা বিজেপির তরফে অভিযোগ করা হয়, ধর্ষণের ধারায় এফআইআর হলেও এখনও অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। জেলা বিজেপি-র সহসভাপতি রমাপ্রসাদ গিরির দাবি, ‘গ্রেপ্তার তো দূরের কথা। এখনও জিজ্ঞাসাবাদের জন্যও ওই নেতাকে ডেকে পাঠায়নি পুলিশ।’ বিজেপি এই ঘটনায় হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে চলেছে বলে জানান রমাপ্রসাদ। সোমবার দুপুরে জেলাশাসকের কার্যালয়ের বাইরে তাঁদের অবস্থান কর্মসূচি হবে।
সোমবার এই সময় অনলাইন যোগাযোগ করেছিল মেদিনীপুর জেলা পুলিশের এক আধিকারিকের সঙ্গে। তিনি জানান, ‘নিয়ম মেনে আমরা এফআইআর দায়ের করেছি। আর নিয়ম অনুযায়ী, অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা খুঁজে পেলে তবেই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়। তদন্ত চলছে। তবে, এখনও পর্যন্ত অভিযোগের কোনও সত্যতা খুঁজে পাইনি আমরা। মেডিক্যাল টেস্টেও কিছু পাওয়া যায়নি।’
তবে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সুপার ইন্দ্রনীল সেন বলেন, ‘ওই মহিলা এখন স্থিতিশীল আছেন। মেডিক্যাল রিপোর্টের বিষয়ে আমি কিছু বলব না। কারণ ওটা তদন্তাধীন বিষয়। নিয়ম অনুযায়ী, যথাযথ ভাবে সবকিছু সম্পন্ন হবে।’