সুপ্রকাশ চক্রবর্তী, হাওড়া
প্রতি বছর বর্ষা এলেই জমা জলের যন্ত্রণায় ভুগতে হয় শহরবাসীকে। হাওড়া পুরসভার ক্ষমতায় বার বার দল বদল হলেও জলজমার সমস্যার কোনও সমাধান হয়নি। নতুন মেয়র এলেই একগুচ্ছ পরিকল্পনার কথা শোনান। কিন্তু সেই বাম জমানা থেকে আজ তৃণমূলের জমানাতেও হাওড়ার জমা জলচিত্রের বিশেষ পরিবর্তন নেই।
পাঁচ বছরের বেশি হয়ে গেল, কোনও নির্বাচন হয়নি হাওড়া পুরসভায়। প্রশাসকমণ্ডলীর পরিচালনায় চলছে পুরসভার কাজকর্ম। স্বাভাবিক ভাবেই পুরসভার নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে ভূরিভূরি অভিযোগ নাগরিকদের। নির্বাচন না–হওয়ায় ওয়ার্ডে–ওয়ার্ডে নেই কোনও জনপ্রতিনিধিও। প্রাক্তন জনপ্রতিনিধিদের কাছে নাগরিকরা অভিযোগ জানাতে গেলে তাঁরাও নির্বাচনের দোহাই দিয়ে এড়িয়ে যান।
তাই বাধ্য হয়ে কেউ কেউ সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেই তুলে ধরেন সেই জল–যন্ত্রণার ছবি।
সেই কথা মাথায় রেখেই এ বছর বর্ষার অনেক আগেই হাওড়া শহরের নিকাশি নালাগুলি সংস্কারের কাজ শুরু করল হাওড়া পুরসভা। পুরসভার উদ্যোগে ইতিমধ্যেই শহরের বিভিন্ন জায়গায় প্লাস্টিক ও নোংরা আবর্জনায় বন্ধ হয়ে যাওয়া নিকাশি নালাগুলি থেকে পাঁক, প্লাস্টিক ও আবর্জনা তোলার কাজ শুরু হয়েছে। কোথাও কোথাও ম্যানহোলের ভিতরে ঢুকেও ম্যানহোল পরিষ্কার করছেন পৌরসভার কর্মীরা।
কেএমডিএ–র উদ্যোগে হাওড়া থানার অন্তর্গত কার্তিকচন্দ্র দত্ত রোডের বার্ন স্ট্যান্ডার্ড কারখানার মোড় থেকে ফোরশোর রোডের রামকৃষ্ণপুর ঘাট পর্যন্ত যে ম্যানহোল রয়েছে, তারও মেরামতির কাজ শুরু হয়েছে। শনিবার থেকে এই কাজ চলবে মঙ্গলবার পর্যন্ত।
অন্য দিকে, হাওড়া পুরসভার উদ্যোগে শহরের বিভিন্ন জায়গায় কোথাও নিকাশি নালা পরিষ্কারের কাজ হচ্ছে, আবার কোথাও নতুন পাম্প হাউস নির্মাণের কাজও শুরু হয়েছে। মধ্য হাওড়ায় বেশ কয়েকটি নিকাশি নালা পরিষ্কারের কাজ চলছে এবং একটি পাম্প হাউস তৈরির কাজও শুরু হয়েছে। একই ভাবে, কদমতলা অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পয়ঃপ্রণালীর মধ্যে জমে থাকা অবাঞ্ছিত ডিভাইডারকেও ভেঙে ফেলা হয়েছে।
অন্য দিকে, হাওড়া পুরসভার অন্তর্গত আন্দুল–মৌড়ি মিল বাজার থেকে সরস্বতী খাল পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় এক কিলোমিটার নতুন নর্দমা তৈরির কাজও এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। উত্তর হাওড়ার কামিনী স্কুল লেনেও একটি পাম্প হাউস তৈরির কাজ চলছে জোর কদমে। হাওড়া পুরসভার প্রশাসক মণ্ডলীর চেয়ারম্যান সুজয় চক্রবর্তী জানান, পুরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে সংস্কারের কাজ চলছে। এ বছর বর্ষায় যাতে শহরে কোনও ভাবে জল জমতে না পারে, সেই কথা মাথায় রেখেই আগাম এই কাজ শুরু করা হয়েছে।
উত্তর হাওড়ার বাসিন্দা শমিতকুমার ঘোষ জানিয়েছেন, হাওড়া পুরসভা ও কেএমডিএ–র উদ্যোগে শহরের ছোট ছোট নিকাশি নালা এবং ম্যানহোলগুলি পরিষ্কার করার কাজ শুরু হলেও শহরের মধ্য দিয়ে যে সমস্ত নিকাশি খাল চলে গিয়েছে, সেগুলি সংস্কারের কাজ এখনও শুরু হয়নি। এই নিকাশি খালগুলির মধ্য দিয়েই জল সরস্বতী নদীতে এবং গঙ্গায় গিয়ে পড়ে। বর্ষার আগে বড় বড় খালগুলি সংস্কার না–হলে জল জমার সমস্যার বিশেষ পরিবর্তন হবে বলে মনে করছেন না তিনি।
যদিও সুজয় চক্রবর্তী জানিয়েছেন, বাম আমলে যে সব ভূগর্ভস্থ নিকাশি নালা তৈরি হয়েছিল, সেইসব নালার ভিতরে পাঁচিল দেওয়া ছিল। যার ফলে নোংরা আটকে জল নিকাশে বাধা পাচ্ছিল। সমস্যা মেটাতে এখন ডুবুরি নামিয়ে সেই পাঁচিল ভাঙার কাজ করা হচ্ছে। পাশাপাশি, রানি ঝিল সংস্কার করতে বলা হয়েছে রেলকে। কোনা পচা খাল সংস্কার করবে সেচ দপ্তর। বাকি খালগুলিতেও দোলের পরে সংস্কারের কাজ শুরু হবে।