• এসে উঠবেন কোথায়, দিশা পান না অনেকে
    এই সময় | ১০ মার্চ ২০২৫
  • অরূপকুমার পাল, ঝাড়গ্রাম

    একঘেয়ে অফিস রুটিনের জীবন থেকে বেরিয়ে এসে দিন দুয়েকের মুক্তি চাইছিলেন মনোজ সিং। কলকাতায় এক বেসরকারি সংস্থার কর্মী। মোবাইলে ইন্টারনেট হাতড়ে শেষমেশ ঝাড়গ্রাম যাওয়ার প্ল্যান করলেন তিনি। খোঁজ নিয়ে দেখলেন, আড়াই ঘণ্টার মধ্যে কলকাতা থেকে সহজেই ট্রেনে ঝাড়গ্রাম পৌঁছনো যায়।

    অফিসে সপ্তাহান্তে ছুটি নিয়ে শনিবার সকালে হাওড়ায় ইস্পাত এক্সপ্রেস ধরে সোজা ঝাড়গ্রাম। কোথায় উঠবেন, তাডা়হুড়োয় স্থির করে উঠতে পারেননি। তাই স্টেশনের বাইরে বেরিয়েই কোথায় যাবেন, কোথায় গিয়ে উঠবেন, ধন্দে পড়ে গেলেন। ছোটগাড়ির চালক এবং টোটো চালকরা একের পর এক হোটেল, হোম-স্টের নাম বলতেই বিভ্রান্তিটা আরও বাড়ল।

    তবে শেষমেশ অন্ধকারে ঢিল ছোড়ার মতোই এক টোটোচালকের কথায় ভরসা করে মনোজ শহর-লাগোয়া একটি হোটেলে। হাফ ছেড়ে বাঁচেন তিনি। মনোজ শুধু একা নন, হঠাৎই ঝাড়গ্রাম ঘুরতে এসে এ ধরনের সমস্যায় পড়েন অনেক পর্যটক। বিশেষ করে, দোল উৎসব, নববর্ষে বা শীতের সময় ঝাড়গ্রামে যখন পর্যটকদের ভিড় বেশি হয়, তখন মনোজের মতো সমস্যায় পড়েন বহু পর্যটকই।

    অনেকে অনলাইনে নির্দিষ্ট কিছু হোটেলের সন্ধান না পেলেও একবার এসে পড়লে কিছু-না কিছু পাওয়া যাবেই, এই ভাবনা ধরে এসে পড়েন। তখনই সমস্যটা বোঝা যায় ভালো করে। স্থানীয়রা অনেকেই বলছেন, সে ক্ষেত্রে টোটো বা ছোট গাড়ির চালকেরা নন, সহায়তা করতে পারে সরকারি পরিকাঠামোর কোনও ব্যবস্থা, কোনও সহায়তা কেন্দ্র।

    পর্যটকদের এমন সমস্যার কথা মাথায় রেখেই বাম আমলে, ২০০৭ সালে ঝাড়গ্রাম স্টেশন সংলগ্ন এলাকার ‘পর্যটন তথ্যকেন্দ্র’ চালু হয়েছিল। দায়িত্বে ছিল ঝাড়গ্রাম পুরসভা। কয়েক বছর চালু থাকার পর তা বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তী কালে, ২০১৯ সালে ধুলো ঝেড়ে পরিষ্কার করে ফের চালু করা হলেও তা এখন তালা বন্ধ। বাইরের থেকে দেখা যায়, ভেতরে কয়েকটি ভাঙা চেয়ার-টেবিল পড়ে রয়েছে এবং ধুলো-ঝুলে ভর্তি ঘর। পিছনে ‘সেলফি জ়োন’ও অপরিষ্কার, ঝোপ-জঙ্গলে ভর্তি।

    ইতিমধ্যে ঝাড়গ্রাম পুরসভার অধীন এই ‘পর্যটন তথ্যকেন্দ্রে’র পরিচালনার দায়িত্ব ঝাড়গ্রাম হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনকে দেওয়ার জন্য লিখিত ভাবে আবেদনও জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনও কোন সদুত্তর পায়নি অ্যাসোসিয়েশন।

    অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শিবাশিস চট্টোপাধ্যায় বলেন,‘বিষয়টি নিয়ে আমরা লিখিত ভাবে পুরসভার চেয়ারম্যানকে জানিয়ে ছিলাম। যেখানে পুরোনো পর্যটন তথ্য কেন্দ্র রয়েছে সেখানে অথবা রবীন্দ্র পার্কের সামনে কোনও জায়গা দেওয়া হলে আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে পরিকাঠামো তৈরি করে নেব।

    যাতে পর্যটকেরা ঝাড়গ্রামে এসে কোনও অসুবিধায় পড়লে সহায়তা পেতে পান বা হোটেল বা গাড়ি ভাড়া সম্পর্কে নির্দিষ্ট তথ্য সেখান থেকে পান। উত্তরবঙ্গে এ রকম ব্যবস্থা রয়েছে। ঝাড়গ্রামে এই সুবিধা এখন।’ তবে ঝাড়গ্রাম পুরসভার চেয়ারম্যান কবিতা ঘোষ বলেন, ‘ওঁরা চিঠি দিয়েছেন। বিষয়টি আমরা আগামী বোর্ড মিটিংয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।’

  • Link to this news (এই সময়)