এই সময়, কালনা ও বর্ধমান: রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে পুজোর ফুল তোলা অভ্যাস ছিল বছর তেরোর কিশোরীর। রবিবারও সকালে ঘুম থেকে উঠে ফুল তুলতে গিয়েই বিষধর সাপের কামড় খায় সে। চিৎকার করতে করতে ছুটে এসে মাকে তার ডান পা দেখায় রিঙ্কু ক্ষেত্রপাল নামে ওই কিশোরী। সেই চিৎকারে সবাই ছুটে এসে দেখেন, কিশোরীর ডান পায়ে জড়িয়ে ধরে রয়েছে বিশাল চেহারার একটি গোখরো।
রিঙ্কুর পা থেকে তখনও ঝরছে রক্ত। কোনওরকমে রিঙ্কুর পা থেকে ছাড়িয়ে সাপটিকে রাখা হয় একটি প্লাস্টিকের বালতিতে। দ্রুত রিঙ্কুকে নিয়ে আসা হয় কালনা মহকুমা হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে ভালো মতো চিকিৎসার সময়ও পাওয়া যায়নি। কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে ওই কিশোরী।
মেমারি থানার বিরে পলতা গ্রামের রিঙ্কু ভাবতেই পারেনি বাড়ির ফুলগাছের গোড়ায় স্তূপীকৃত ভাঙা টালি আর কাঠের গুঁড়ির মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে বিষধর সাপ। এ দিন সেই গুঁড়ির উপরে দাঁড়িয়ে ফুল তোলার সময়ে গোখরোটি কালনার বিরুহা এসসি হাই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীর ডান পায়ে জড়িয়ে ধরে ছোবল মারে। দ্রুত রিঙ্কুকে নিয়ে আসা হয় কালনা মহকুমা হাসপাতালে। সঙ্গে আনা হয় প্লাস্টিকের বালতিতে রাখা সাপটিকেও।
এর পরে পেশায় চাষি রিঙ্কুর বাবা নিখিল ক্ষেত্রপাল হাসপাতালে চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘ডাক্তারবাবু আমার মেয়েকে সাপে কামড়েছে। ওকে বাঁচান।’ সঙ্গে সঙ্গে ওই কিশোরীর চিকিৎসা শুরু হলেও বাঁচানো যায়নি তাকে। মেয়ের মৃত্যুশোকে ডুকরে কেদে উঠে নিখিল বলেন, ‘রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে মেয়ে পুজোর জন্য ফুল তুলত। আজ সকাল সাড়ে ছটা নাগাদ বাড়ির মধ্যে থাকা গাছ থেকে ফুল তোলার সময়ে এমন ঘটে গেল।’
গত বছর মেয়ের দোল খেলার ছবি মোবাইলে দেখে নিখিল আরও ভেঙে পড়েন। বলেন, ‘এটা গত বছরের ছবি। রং খেলতে খুব ভালোবাসত মেয়ে। আর ক’দিন পরেই দোল। আমাদের সব কিছু রংহীন হয়ে গেল।’ নিখিলের প্রতিবেশী নারু সাহা বলেন, ‘সাপ কামড়ানোর পড়ে ওর পায়ের দুটো জায়গায় বাধন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতে লাভ হলো না।’
সর্প বিশেষজ্ঞ দেবব্রত মুখোপাধ্যায়ের যুক্তি, ‘সর্পদষ্টকে যতটা সম্ভব দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসতেই হবে। কোনও বাঁধন দেওয়ার দরকার নেই। আমার মনে হচ্ছে, এই সব বাঁধন দেওয়া বা অন্য কিছু করতে কিছুটা সময় নষ্ট হয়েছে। আর সাপটা ভালো পরিমাণে বিষ ঢেলেছিল। ভয় পেয়েই কামড়ে দিয়েছে সাপটি।’