• জটিল অস্ত্রোপচারে নজির গড়ল পুরুলিয়া হাসপাতাল
    এই সময় | ১০ মার্চ ২০২৫
  • এই সময়, পুরুলিয়া: চার বছর ধরে পেটের ব্যথায় ভুগছিলেন কাশীপুর ব্লকের মনতোড়িয়া গ্রামের বছর পঞ্চাশের সঞ্জয় মাহাতো। ওষুধ খেলে সাময়িক নিরাময় মিললেও সমস্যা রয়েই গিয়েছিল। স্থানীয় একাধিক চিকিৎসকের কাছে গিয়েও লাভ না-হওয়ায় পরামর্শ নিতে বাধ্য হন দক্ষিণ ভারতের একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকের কাছে। পরীক্ষায় ধরা পড়ে, তিনি প্যানক্রিয়াটাইটিসে আক্রান্ত। এর সঙ্গে ছিল হার্নিয়ার জটিল উপসর্গ। কিন্তু চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ায় ফিরে আসতে হয় তাঁকে।

    এর পরে শুরু হয় এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছোটার পালা। ঝাড়খণ্ডের টাটানগরের বেসরকারি হাসপাতাল থেকে রাঁচির সরকারি মেডিক্যাল কলেজ। পরে দুর্গাপুরের একাধিক বেসরকারি হাসপাতাল। দিশাহীন সঞ্জয় মাহাতো কয়েক বছর আগে দ্বারস্থ হন কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালেরও। সেখানেই এক চিকিৎসক তাঁকে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন। কিন্তু তিনি নিজে ব্যস্ততার কারণে ওই অস্ত্রোপচারের জন্য নির্দিষ্ট তারিখ দিতে পারছিলেন না।

    অবশেষে মিলেছে স্বস্তি। গত বুধবার সেই জটিল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয় পুরুলিয়ার দেবেন মাহাতো মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে। জেনারেল সার্জারি বিভাগের (ইউনিট-টু) শল্য চিকিৎসক পবন মণ্ডল অস্ত্রোপচার করেন। সহায়ক ছিলেন দুই অ্যানাস্থেসিস্ট অনমিত্র মণ্ডল ও সোমা সান্যাল।

    ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে পেটে ব্যথা শুরু হয় সঞ্জয় মাহাতোর। স্থানীয় চিকিৎসকেরা সাময়িক ভাবে ব্যথা উপশমের জন্য ওষুধ দিলেও সঙ্কট কাটছিল না। পরিচিতদের পরামর্শে সঞ্জয় ছুটে যান চেন্নাইয়ের বেসরকারি হাসপাতালে। তখনই ধরা পড়ে, তিনি প্যানক্রিয়াটাইটিসে আক্রান্ত। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার খরচ এতই বেশি ছিল, তাঁর মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষের পক্ষে সেই খরচ বহন করা সম্ভব ছিল না।

    সঞ্জয়ের কথায়, ‘অত টাকা দিয়ে অস্ত্রোপচার করানোর সামর্থ্য আমার নেই। তাই ফিরে আসি। কিন্তু পেটের ব্যথা এত বাড়তে শুরু করে, একটা সময়ে তা অসহনীয় হয়ে ওঠে। নানা জায়গায় ঘুরে শেষ পর্যন্ত পুরুলিয়া মেডিক্যাল কলেজে অস্ত্রোপচার হয়েছে। এই ডাক্তারবাবু আমার কাছে সাক্ষাৎ ঈশ্বর।’

    তবে তা নিয়ে বাড়তি উচ্ছ্বাস দেখাচ্ছেন না শল্য চিকিৎসক পবন মণ্ডল। তিনি বলছেন, ‘ওঁর প্যানক্রিয়াটাইটিসের সঙ্গে জটিল এপিগ্যাস্ট্রিক এবং অ্যাম্বিলিক্যাল হার্নিয়া ছিল। অন্ত্রেরও একটি অংশ চামড়া ফেটে বেরিয়ে এসেছিল, ফলে যন্ত্রণা হচ্ছিল। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। উনি এখন সুস্থ রয়েছেন। সেটাই চিকিৎসক হিসেবে আমার সেরা প্রাপ্তি।’

  • Link to this news (এই সময়)