• অবাধে সোনাঝুরি গাছ কাটার চেষ্টা, আঙুল প্রধানের দিকে
    এই সময় | ১০ মার্চ ২০২৫
  • এই সময়, বর্ধমান: পঞ্চায়েত প্রধানের মৌখিক নির্দেশে এক লক্ষ ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে দেদার কাটা হচ্ছিল সোনাঝুরি গাছ। বন দপ্তর, পঞ্চায়েত সমিতি বা ব্লক অফিসেও এই গাছ কাটার বিষয়ে ন্যূনতম অনুমতি নেওয়া হয়নি বলে জানা গিয়েছে।

    স্থানীয়দের চেষ্টায় ৪৭টি গাছ কেটে ফেলার পরে বন দপ্তর ও বিডিও অফিসের আধিকারিকরা এসে গাছ কাটা বন্ধ করেন। পাশাপাশি কেটে রাখা গাছ বাজেয়াপ্ত করা হয়। গাছ কাটার জন্য নিযুক্ত প্রধান ঠিকাদারকে অফিসে এসে কাগজপত্র দেখানোর নির্দেশ দেয় বন দপ্তর।

    রায়না–১ ব্লকের নারুগ্রাম পঞ্চায়েতের শিফটা গ্রামে কয়েকদিন ধরে কাটা হচ্ছিল গাছগুলি। পঞ্চায়েত প্রধান পিন্টু মোল্লার নির্দেশে এই কাজ হচ্ছিল বলে জানিয়েছেন গাছ কাটার সঙ্গে জড়িত কামাল আনসারি। স্থানীয় লোকেদের থেকে খবর পেয়ে রবিবার সকালে এলাকা পরিদর্শন করেন জেলা বন দপ্তরের আধিকারিকরা। বন দপ্তরের কর্মীরা জানিয়েছেন, কোনওরকম অনুমতি নেওয়া হয়নি গাছগুলি কাটার জন্য।

    স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শিফটা গ্রামের বেশ কিছুটা খাসজমির উপরেই পঞ্চায়েত থেকে লাগানো হয়েছিল চারশোও বেশি সোনাঝুরি গাছ। স্থানীয় বাসিন্দা ও পঞ্চায়েত সদস্য আনন্দ ঘোষ বলেন, ‘শিফটার পুকুরের ধারে এই খাসজমির প্রায় সাড়ে তিনশো ছোট–বড় সোনাঝুরি গাছ লাগানো হয়েছিল আগের পঞ্চায়েত বোর্ডের সময়ে। কয়েক দিন আগে ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত প্রধান শান্তি দে ফোন করে আমাকে গাছ কাটার বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নিতে বলেন।

    জানতে পারি, পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান, বর্তমানে প্রধানের দায়িত্বে থাকা পিন্টু মোল্লা তার প্যাডে কামাল হোসেন মানো এক ব্যক্তিকে গাছ কাটার নির্দেশ দিয়েছেন। তার থেকে ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকাও নিয়েছেন। এর পরে বিডিও অফিসে বিষয়টি জানাই। বিডিও স্যর এবং বন দপ্তর ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই ৪৭টি গাছ কেটে নেওয়া হয়েছে।’

    এ দিন বন দপ্তরের আধিকারিক এসে কেটে ফেলা গাছের গোড়াগুলি দেখে ছবি তুলে নিয়ে যান। বর্ধমান বন দপ্তরের রেঞ্জ অফিসার কাজল বিশ্বাস বলেন, ‘কিছু গাছ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। রিপোর্ট খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে নারুগ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা উপ-প্রধান পিন্টু মোল্লা বলেন, ‘আমি কাউকে গাছ কাটার নির্দেশ দিইনি। স্থানীয় এক গাছ ব্যবসায়ীকে বলা হয়েছিল গাছগুলি দেখে কত দাম সে দিতে পারবে, তা জানানোর জন্য। তার বদলে ওই লোকটি গাছ কেটে নিয়েছে।’

    গাছ এমন জিনিস নয় যে, রাতারাতি চুরি করে নিয়ে যাবে কেউ। ৪৭টি গাছ কাটতেও সময় লেগেছিল। প্রধান হিসেবে তিনি কেন উদ্যোগী হননি? কেন থানায় অভিযোগ জানাননি? এ সব প্রশ্নের অবশ্য কোনও উত্তর দেননি পিন্টু মোল্লা। গাছ কাটার সঙ্গে জড়িত কামাল আনসারি বলেন, ‘আমাকে উনি–ই গাছ কাটার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আমি বৌমার সোনা বন্ধক রেখে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা দিয়েছি। এখন গাছ কাটতে না দিলে টাকা ফেরত দিতে হবে। না হলে আমিও ছাড়ব না।’

  • Link to this news (এই সময়)