শ্বশুরবাড়ি থেকে খবর এসেছিল মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। তা শুনেই রবিবার গভীর রাতে মেয়ের শ্বশুরবাড়ি ছুটেছিলেন বাড়ির সবাই। সেখানে গিয়ে বাড়ির মেয়েকে পেয়ারা গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখা গিয়েছে বলে অভিযোগ বাপের বাড়ির লোকের। তাঁদের দাবি, শ্বশুরবাড়ির লোকজনই খুন করে গাছে ঝুলিয়ে দিয়েছে তাদের মেয়েকে। নিহত মহিলার নাম আজমিরা খাতুন, বয়স ২২ বছর। রবিবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটেছে বহরমপুর থানার শাহজাদপুর পঞ্চায়েতের দুর্গাপুর গাগরাখালি গ্রামে। কিম্তু কেন এই অভিযোগ করছে আজমিরার বাপের বাড়ি?
আজমিরা খাতুনের বাড়ির লোক জানাচ্ছেন, বছর দুয়েক আগে আজমিরা খাতুনের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল রাকিবুলের। রাকিবুল পাসপোর্ট-ভিসা করে দেওয়ার দালালি করে। আজমিরার এক জামাইবাবু মিরাজ শেখের অভিযোগ, ‘বিয়ের পর থেকেই বাবার বাড়ি থেকে টাকা-পয়সা নিয়ে আসার জন্য আজমিরার উপরে চাপ সৃষ্টি করত রাকিবুল। এক বার ধার-দেনা করে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল। কন্যা সন্তান হওয়ার পরে ফের টাকার দাবি করে কাজের সন্ধানে আরবে যাবে বলে। বাধ্য হয়ে জমি বিক্রি করে ১ লক্ষ টাকা তুলে দিয়েছিলেন শ্বশুর।’ মিরাজের অভিযোগ, ‘ওই টাকা নিয়ে তিন মাস আগে আরবে না গিয়ে মুম্বইয়ে চলে গিয়েছিল প্রেমিকাকে সঙ্গে নিয়ে। সেখানে প্রেমিকার সঙ্গে কাটিয়ে দেড় মাস আগে গ্রামে ফিরে তাকে বিয়েও করে। এ নিয়ে গ্রামে সালিশি সভাও বসেছিল। কিন্তু কিছু হয়নি।’ দ্বিতীয় বিয়ের পর থেকেই প্রথম পক্ষের স্ত্রী আজমিরার সঙ্গে ঝামেলা বাড়তে থাকে রাকিবুলের। দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীকে মেনে নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হতো বলেও অভিযোগ আজমিরার বাপের বাড়ির লোকের। কিন্তু এই দাবি মেনে নেননি বহরমপুর কলেজের স্নাতক আজমিরা। এর ফলে প্রায়শই তাঁর উপর অত্যাচার করা হতো বলে অভিযোগ। আজমিরার এক কাকা সেরিফুল হোসেন বলেন, ‘কিছুদিন আগে তাঁর মুখে অ্যাসিড ছুড়ে মারার চেষ্টা করে রাকিবুল। তখন কোনওরকমে বেঁচে গিয়েছিল ভাইজি।’
আজমিরার বোন কাশ্মীরা খাতুন বলেন, ‘আমার দিদি আত্মহত্যা করেছে বলে জানানো হয়। তখন রাত দুটো বাজে। এর পরে গিয়ে দেখি দিদি পেয়ারা গাছের ডালে দড়ির ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ঝুলছে। পা কিন্তু মাটিতে ঠেকে রয়েছে। পিঠে ও হাতে ছেঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার দাগ রয়েছে। উঠোনেও তার ছাপ রয়েছে। ঘরের মধ্যে শ্বাস রোধ করে খুন করে নিয়ে এসে বাইরে ঝুলিয়ে দিয়ে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে।’ গোটা বিষয় নিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে আজমিরার পরিবার। সোমবার বহরমপুর থানায় আজমিরার স্বামী রাকিবুল, শাশুড়ি তাঞ্জিলা, রাকিবুলের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী রিজিয়া খাতুন, রিজিয়ার মা সকি বিবি ও রাকিবুলের এক মামা রাইহান শেখের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। পুলিশ জানায়, ঘটনার পরেই সকলেই বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। খুনের মামলা দায়ের করে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে, তাদেরকে গ্রেফতার করার চেষ্টা চলছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত বলা সম্ভব নয় এটা খুন নাকি আত্মহত্যা, জানিয়েছে পুলিশ।