খাতায়কলমে শহরের কয়েক হাজার পুকুর ও জলাশয়ের মালিক কলকাতা পুরসভা। সেগুলিকে সারা বছর পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখতে কয়েক কোটি টাকা খরচ হয় পুরসভার। পুকুরের পাড় মেরামতেও বিপুল টাকা বেরিয়ে যায়। যদিও জলাশয় থেকে পুরসভার কানাকড়িও রোজগার হয় না। পুরসভার অধীনে যত পুকুর রয়েছে, তার সিংহভাগই ভোগদখল করছেন অন্যেরা। এ নিয়ে এতদিন পুরকর্তাদের কোনও হেলদোল ছিল না। সম্প্রতি এ নিয়ে নড়েচড়ে বসেছেন পুরকর্তৃপক্ষ। কিন্তু গোড়াতেই বিভ্রাট তৈরি হয়েছে।
আয় বাড়াতে তাদের অধীনে থাকা পুকুর ও জলাশয়গুলি মাছ চাষের জন্যে লিজে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে পুরসভা। সেই মতো বরো অফিসগুলিকে নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে গিয়েই প্রবল বাধার মুখে পড়ছেন পুর–আধিকারিকরা। অনেক বরো আধিকারিক জানাচ্ছেন, খাতায়কলমে পুরসভা মালিক হলেও বহু পুকুর ও জলাশয় অনেক আগে থেকেই বেদখল হয়ে গিয়েছে। সেখানে অন্যেরা মাছ চাষ করছেন। কোথাও আবার সাঁতার শেখানো হয়। কোথাও আবার ক্লাবের সদস্যরা পুকুরে মাছ চাষ করেন। পুকুর লিজের কথা শুনে তাঁরা আপত্তি করছেন। শাসকদলের স্থানীয় নেতা–কর্মীরাও বাধা দিচ্ছেন। কাউন্সিলাররাও তাতে মদত দিচ্ছেন বলে অভিযোগ। পুরসভার এক আধিকারিকের কথায়, ‘আমরা যতই চেষ্টা করি না কেন এই নির্দেশ কার্যকরী করা খুব শক্ত।’
পুরসভার হিসাব অনুযায়ী, এই মুহূর্তে কলকাতায় সবমিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার পুকুর ও জলাশয় রয়েছে। তার মধ্যে কিছু আছে বেসরকারি মালিকাধীন, কিছু পুকুর পুরসভার ম্যানেজমেন্ট কন্ট্রোলে আর কিছু পুকুরের মালিক পুরসভা। পুরসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাদের অধীনে থাকা পুকুরগুলিতে মাছ চাষের ব্যবস্থা করা হবে। সেটা করে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চাইছে পুরসভা।
প্রথমত, পুকুরে মাছ চাষ করলে কচুরিপানা জন্মাবে না এবং দ্বিতীয়ত, পুকুরগুলি পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন থাকবে। আয়ও হবে। পুরসভার হিসাব অনুযায়ী, গোটা কলকাতায় এই ধরনের ৩৫০ পুকুর রয়েছে যার মালিক পুরসভা। যে–সব পুকুর পুরসভার ম্যানেজমেন্ট কন্ট্রোলে রয়েছে, সেখানেও মাছ চাষের ভাবনা রয়েছে। কিন্তু স্থানীয়দের বাধায় সেই ভাবনা ভেস্তে যেতে বসেছে।
পুরসভার পরিবেশ বিভাগের মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দারের বক্তব্য, ‘কিছু জায়গায় স্থানীয়দের বাধায় পুকুর লিজে দিতে সমস্যা হচ্ছে। তবে সেটাই আসল সমস্যা নয়। আসলে পাড়ার ছেলেরা টেন্ডারে কী ভাবে অংশ নিতে হয়, তার নিয়মকানুন জানেন না। সে জন্যে অনেকে টেন্ডারে অংশ নিতে পারছেন না। আমি তাই টেন্ডার–প্রক্রিয়া একটু শিথিল করতে বলেছি।’