এই সময়,আলিপুরদুয়ার: কার্শিয়াং বনবিভাগের বাগডোগরা রেঞ্জের ব্যাঙডুবিতে একটি মাদি হাতিশাবক টানা বাইশ দিন অসুস্থতার পরে মারা যায় সোমবার। এমনিতে চিকিৎসায় সাড়া না–দিয়ে অসুস্থ হাতিশাবকের মৃত্যু হতেই থাকে। কিন্তু সোমবারের ঘটনাটি রীতিমতো চিন্তায় ফেলে দিয়েছে বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞদের। কারণ তাঁদের একাংশের মনে হচ্ছে, ব্যাঙডুবির হাতিটি ‘ট্রাইপ্যানোসোমা’র সংক্রমণে মারা গিয়েছে। অথচ ভারতের জঙ্গলে বা চিড়িয়াখানায় এমন সংক্রমণে হাতির মৃত্যুর ঘটনা বিরল।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, হাতিটির মৃত্যুর পিছনে সম্ভবত রয়েছে ‘সুরা’ (SURRA) রোগ, যা ‘ট্রাইপ্যানোসোমা ইভান্স’ নামের এক ধরনের পরজীবী প্রোটোজোয়ার মাধ্যমে শরীরে ঢোকে। ওই রোগে আক্রান্ত হলে মানুষ অথবা বন্যপ্রাণী বা গবাদি পশুরা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে (স্লিপিং সিকনেস) এবং ক্রমশ নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়। এই সংক্রমণ রোখার ক্ষমতাধারী একমাত্র ট্রাইপ্যানোসাইড ড্রাগ পাওয়া যায় থাইল্যান্ডে। সেই কারণে সম্প্রতি থাইল্যান্ড থেকে বিশেষজ্ঞ তিন প্রাণী চিকিৎসকের দল উত্তরবঙ্গে এসে হাতিটির শারীরিক পরীক্ষা করেন। তাঁরাও রিপোর্টে প্রাথমিক ভাবে জানিয়েছেন, হাতিটি ট্রাইপ্যানোসোমায় আক্রান্ত হয়েছিল। হাতিটি যে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল, তা অস্বীকার করছেন না উত্তরবঙ্গের শীর্ষ বনকর্তারাও।
কীভাবে ছড়ায় ওই রোগ? আফ্রিকা মহাদেশের দেশগুলিতে 'সেৎসি' (Tsetse) নামের এক ধরনের মাইক্রোস্কোপিক মাছি চক্রাকারে দংশন করে ওই রোগের বাহক এককোষী পরজীবীদের বন্যপ্রাণীদের দেহে ঢোকায়। ১৮৮০ সালে ব্রিটিশ পশু চিকিৎসক গ্রিফিথ ইভান্স ভারতীয় ঘোড়া ও উটের দেহে সর্বপ্রথম ওই রোগের উপসর্গ আবিষ্কার করেন। আফ্রিকার পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়া, ভারতীয় উপমহাদেশেও বন্য ও গবাদি পশুর শরীরে এই ‘সুরা’ রোগের অস্তিত্ব মিলেছে। তবে বাংলায় বা গোটা দেশে এখনও পর্যন্ত কোনও হাতি এই রোগের উপসর্গে মারা গিয়েছে বলে মনে করতে পারছেন না বনকর্তারা। এ দেশে শুধু মাছি নয়, বাদুড়ের মাধ্যমেও ‘ট্রাইপ্যানোসোমা ইভান্স’ সংক্রমণ ছড়ায়।
পরিস্থিতি উদ্বেগজনক বুঝেই সব জঙ্গলে বিশেষ নজরদারির নির্দেশ দিয়েছেন উত্তরবঙ্গের বন্যপ্রাণ শাখার বনপাল ভাস্কর জেভি। ট্রাইপ্যানোসোমায় আক্রান্ত হয়েই হাতিশাবকটি মারা গিয়েছে কি না, তা নিয়ে নিশ্চিত হতে উত্তরপ্রদেশের বেরিলিতে, ইন্ডিয়ান ভেটেরনারি রিসার্চ ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে মৃত হাতির দেহরসের নমুনা। ভাস্কর জেভি বলেন, ‘মৃত হাতিশাবকটির উপসর্গে আমাদের অনুমান, ‘ট্রাইপ্যানোসোমা’ সংক্রমণেই তার মৃত্যু হয়েছে। আইভিআরআইয়ের চূড়ান্ত রিপোর্টের অপেক্ষায় আছি। উত্তরবঙ্গের জঙ্গলে কোন বাহকের মাধ্যমে এই সংক্রমণ ছড়াস, সেটা আফ্রিকার সেই মাইক্রোস্কোপিক মাছিই কি না, সেটারও উত্তর খুঁজছি আমরা।’