• ভূগর্ভস্থ জলস্তর দ্রুত কমার বিচারে দেশে ৩ নম্বরে বাংলা
    এই সময় | ১১ মার্চ ২০২৫
  • একটা নয়, অনেকগুলো কারণ। অপরিকল্পিত নগরায়ন। তুলনামূলক ভাবে ছোট একটা এলাকার অতি দ্রুত ঘন বসতিপূর্ণ তল্লাটে পরিণত হওয়া। বৃষ্টির প্যাটার্ন বা ধরনে বদল। পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গার ভূগর্ভস্থ জলস্তর কমার পিছনে এ সব ফ্যাক্টর কাজ করছে— কোথাও কোথাও ফ্যাক্টরগুলো কাজ করছে একসঙ্গে, মিলিত ভাবে। বিজ্ঞানপত্রিকা ‘হাইড্রোলজি জার্নাল’–এ প্রকাশিত একটি প্রবন্ধ থেকে এ রকম সম্ভাবনার কথাই মনে হচ্ছে পরিবেশবিজ্ঞানীদের। ওই প্রবন্ধে ইউএসএ–র টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ভারতের যে ছ’টি রাজ্যে গত দু’দশকে সব চেয়ে দ্রুত হারে ভূগর্ভস্থ জলস্তর কমেছে, তাদের মধ্যে ৩ নম্বরে বাংলা।

    প্রতি বছর গ্রীষ্মেই ফিরে আসে চেনা ছবিটা। কল থেকে পড়তে থাকা জলের তোড় ক্রমশ কমতে শুরু করে। পাড়ার কলে জল সংগ্রহের জন্য স্থানীয়দের লাইন দীর্ঘ থেকে ক্রমেই দীর্ঘতর হয়। দক্ষিণবঙ্গের পশ্চিমের জেলাগুলোর বিভিন্ন জায়গায় তো স্থানীয় পুরসভার উদ্যোগে আলাদা ভাবে পানীয় জল সরবরাহ করতে হয় পাড়ায় পাড়ায়। পানীয় জলের এই অনটন ক্রমেই বাড়ছে। কেন এমন হচ্ছে? এর নেপথ্যে কি কোনও প্রাকৃতিক কারণ? উত্তর খুঁজতে ইউএসএ–র গবেষকরা সেন্ট্রাল গ্রাউন্ড ওয়াটার বোর্ড (সিজিডব্লিউবি), মৌসম ভবন এবং গ্র্যাভিটি রিকভারি অ্যান্ড ক্লাইমেট এক্সপেরিমেন্টের (গ্রেস) মতো সংস্থা থেকে নানা ধরনের তথ্য সংগ্রহ করেছেন। এবং সেই সব তথ্য ভয় ধরানোর পক্ষে যথেষ্ট। গবেষণায় জানা গিয়েছে, গত ২০ বছরে উত্তর ভারত ৬৪.৬ বিলিয়ন ঘনমিটার ভূগর্ভস্থ জলস্তর খুইয়েছে। ওজনের হিসেবে প্রায় ৫৭ বিলিয়ন টন ভূগর্ভস্থ জল।

    ভূগর্ভস্থ জলস্তর অতি দ্রুত কমার নিরিখে চিহ্নিত করা হয়েছে ভারতের ছ’টি রাজ্যকে। এই রাজ্যগুলোকে ‘হটস্পট’ হিসেবে উল্লেখ করছেন হাইড্রোলজিস্ট বা জলবিজ্ঞানীরা। গ্র্যাভিটি রিকভারি অ্যান্ড ক্লাইমেট এক্সপেরিমেন্ট বা গ্রেসের রিপোর্ট অনুযায়ী, হটস্পটগুলোর মধ্যে যুগ্ম ভাবে ১ নম্বরে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা। তার পর উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, ছত্তিসগড় ও কেরালা। বাংলার অবস্থা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘অন্য জায়গাগুলোয় প্রধানত কৃষিকাজের জন্য ভূগর্ভস্থ জলস্তরের ব্যবহার অনেক বেড়েছে। কিন্তু বাংলার পরিস্থিতি একেবারে আলাদা। এখানে গত ২০ বছরে গৃহস্থালির কাজের জন্য জলের চাহিদা প্রায় ২৪ শতাংশ বেড়েছে। ফলে, ভূগর্ভস্থ জলের পরিমাণ বছরে অন্তত তিন শতাংশ হারে কমেছে।’

    গৃহস্থালির কাজে জলের ব্যবহার অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যাওয়ার পিছনে অপরিকল্পিত ও অবৈজ্ঞানিক নগরায়নকেই দায়ী করছেন হাইড্রোলজিস্টদের একাংশ। তাঁরা বলছেন, ‘নির্দিষ্ট কিছু কিছু জায়গা হঠাৎই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ফলে, সেই জায়গায় জনবসতি বেড়ে উঠছে দ্রুত।’ আবার মৌসম ভবনের বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, স্বল্পস্থায়ী কিন্তু তীব্র প্রাবল্যের বৃষ্টির পরিমাণ ইদানীং অনেকটাই বেড়েছে। হাইড্রোলজিস্টদের মতে, এ ধরনের বৃষ্টি ভূগর্ভস্থ জলের স্তর বাড়াতে কোনও সাহায্য করে না।

  • Link to this news (এই সময়)